তপার গল্প
তপা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন পরিপূর্ণ বেকার। তার
মাঝেমাঝে মনে হয়, আমি কে? এই পৃথিবীতে আমার কাজ কী? কেমন যেন দার্শনিক ভাবনাচিন্তা
ওর মনের মধ্যে ভুস করে ভেসে ওঠে। একদিন চায়ের দোকানের বন্ধুদের মাঝে কথাটা
পেড়েছিল। ‘এ পৃথিবীতে আমি কেন এলাম বল তো?’ খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠেছিল বুলান। ‘তুমি তো আর নিজে নিজে
আসোনি বাবা, তোমার মাকে আদর
করতে করতে তোমার বাবা তোমাকে পৃথিবীতে এনে ফেলেছে।’ এই বদ রসিকতা একদম ভালো লাগেনি
তপার। প্রচণ্ড বিরক্তিতে ওখান থেকে উঠে এসেছিল। মহাজাগতিক কোনও প্রশ্নই এদের মনে
জেগে ওঠে না। এইসব ভাবনার মধ্যে থাকলেও তপা চাকরির অ্যাপ্লিকেশন কিন্তু পাঠিয়ে
যাচ্ছিল। মাঝেমাঝে ভাবে কত বন্ধুরই তো মেয়ে বন্ধু রয়েছে। তারও একটা মেয়ে বন্ধু
থাকলে ভালো হত। দুটো মনের কথা বলা যেত। কিন্তু বন্ধুত্ব করার মতো কোনও মেয়েই সে
খুঁজে পায় না। কিন্তু পেল। এটা কি ভগবান
মনের
কষ্ট বুঝে পাঠিয়ে দিল! খুব ভগবান মানে তপা।
পাড়ারই মেয়ে অলি। বাড়ির সামনে
দাঁড়িয়েছিল তপা। এগিয়ে এসে বলল, ‘তপাদা, কাল অনলাইন ক্লাসটা করতে পারিনি। বিশাখার
বাড়ি থেকে নোটগুলো আনতে যাব। তুমি আমার সঙ্গে যাবে? ওপাড়ার ছেলেগুলো কেমন যেন তাকায়।’ ভেতরটা
যেন সেতারের ঝালার মতো ঝিমঝিম করে বেজে উঠল। হেসে বলল, ‘চলো।’
তপা এরপর একটু যেন অলির প্রতি মনোযোগী হল। অপেক্ষায় থাকে
আবার কবে যেতে বলবে। অপেক্ষায় বেশিদিন
থাকতে হল না। একদিন এসে বলল,
‘চলো
তপাদা, ‘মোরে’র দোকান
থেকে কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসি।’ ফেরার পথে অলি আচমকাই বলল, ‘তোমাকে আমার খুব
ভালোলাগে তপাদা।’ শোনামাত্রই তপার বুকের মধ্যে ধড়াস ধড়াস শব্দটা যেন সজোরে বাজতে
লাগল। তপা চুপ করে গেল। কে যেন কানের কাছে ফিশফিশ করে বলছে, ‘তুমি কে? এ পৃথিবীতে তোমার কাজ কী?’ চলতে চলতে অলি হঠাৎ খেয়াল করল তপা কোনও কথা
না বলে ওর সঙ্গে চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে। আলতো করে একটা ঠেলা মারল। তপা যেন অনেক দূর
থেকে অলির কণ্ঠস্বর শুনতে পেল,
‘কী
হয়েছে তপাদা?’
No comments:
Post a Comment