বাক্‌ ১৫০ ।। পলাশ চৌধুরী

এ প্রেম হরিণের গুম

 

একের ওপর আর-এক মালসা ছড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তাময়। চড়ুই প্রপঞ্চ হিসেবে ‘রেডিয়েশন’ কথাটা যথেষ্ট আস্থাশীল মনে না হলেও, বিশেষত বিস্তার স্থূলতা পেলে যেভাবে নিজ ‘শরীর কে ওয়াস্তে’ বলেও বিশ্বাস অর্জিত হয় না, তেমন বিরাগের পর আদিদেব যেভাবে শিথিল হয়ে যৌনাঙ্গ-বিষ পিঁপড়ের ঘামে নষ্ট করে, শ্রবণ সেভাবেই টেবিল ভর্তি নোংরা নিয়ে অবিশ্বাসের শ্রীভঙ্গে কল্পিত আসর জমাল মেয়েটির।

প্রেম বিশেষত ন-আস্থা পর্যন্ত স্থির, গোলাপি মেঘের গোল-আলাপ পর্যন্ত সুন্দর এবং পরিচয় থেকে শুরু করে পর-ই আশ্রয় ভাবা অবধি কাঁপন। শ্রবণ যেভাবে ভালবাসতে পারত দীপ্তিকে, তার অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় বিষযুক্ত মাংসের প্রভাব ফেলে গিয়েছে দীপ্তি। বর্তমানে দীপ্তি নামটিও তার কাছে এতটা দীর্ঘ মনে হয়, কয়েকপাতা প্রলাপ লিখে ফেললেও ওই নামখানি লিখতে তার কলম ক্লান্ত হয়ে আসে। দীর্ঘ অবসরে নুয়ানো মাথার উপর উস্কোখুস্কো চুলগুলিতে বাতাস ছুঁয়ে গেলে সে দীপ্তির অল্পই নশ্বর অনুবাদ করে।

আপাতত পাগলপ্রায় গূঢ় ছেলেটি কাব্যের কাঁচামালের সন্ধানে মাথা নুইয়েছে। আশেপাশে নিরীশ্বর ছটা, আর একটা স্পর্শ অনুভব করে। ঠিক নির্ধারিত না হলেও, গাল নয় এটা স্তনের মসৃণ বুঝে নিতে এখনও সক্ষম সে। এই তো কয়েকটি রাত আগেই, কলেজ ট্যুর, অন্ধকার বাসে একই সিটে বসে আলো উদযাপন, ভেতর ভেজার শিহরণ, চেনা গন্ধে বুঁদ। শ্রবণ সেভাবে ঘটনা আঁকতে পারলেও, স্ল্যাং ছুটিয়ে প্ল্যাঙ্কটন আঁকতে পারত না কখনও। অথচ দীপ্তি কত সাবলীল তাকে দিয়ে বলিয়ে নিত ‘মাই, পেটের নীচেই লেপ্টে থাকে বাই।’

‘কি সব ভাবছি আমি!’—বলেই অল্প ঢোঁক গিলে ফেলল শ্রবণ। ‘আচ্ছা দীপ্তি কি এখনও এভাবে ভাবে? এখন আর মনে থাকার কথাও নয় হয়তো, একবার ফোন করব ওকে!’ এখনও দীপ্তির ফোন নাম্বার ডিলিট করেনি শ্রবণ এখনও তার লাস্ট সিন চেক করে প্রতি রাতে। খুব ইচ্ছে করে কেমন আছে জানতে চাইতে। দীপ্তি এখনও অবিবাহিত সিঙ্গেল তাহলে কী এমন হল!

খুব বলতে ইচ্ছে করে এসব কথা শ্রবণেরকিন্তু শুনবে কে? অনেক বন্ধুকে বলতে গিয়েও শেষ অবধি না বলেই ফিরে এসেছে। তবে একটি কথা সে ডাইরির পাতায় বহুবার লিখেছে ‘সে রাতে আমার পাহাড়স্পর্শে যেভাবে ভেঙে গিয়েছিল তোমার প্রপাত, তাতে অমন আরও কয়েকটি শিখার খাতে তলিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ছিল না মোটেই, তুমি যে পরম্পরায় প্রবাহিত হয়েছ, সে চমকে চরম যা হওয়ার সেটুকুই হয়েছে, তার বেশি বা কম নয়।’

শিখা তাদের কমন ফ্রেন্ড অথচ তীব্র যৌন হয়রানি শিখাকে টেনে এনেছিল শ্রবণের কাছে। সেই মুহূর্তে দু’টি নগ্ন শরীর আড়া কপিকল হয়ে শ্রবণের পাশে থাকলেও উত্তেজনার দীর্ঘ দীপ্তিতে শিখাকে আলাদা করতে পারেনি সে। তারপর থেকে শিখাকে দেখাও যায়নি কখনওআর কেউ কোনোদিন জানতেও পারেনি কি হয়েছিল সেই রাতে। হয়তো জানাতে পারলে শ্রবণের পাগলামি নিস্তব্ধতা পেরিয়ে নিস্তার পেত কিন্তু সে সুখ কেড়ে নিতেই নিশ্চুপে দীপ্তি সরে গিয়েছিল শ্রবণের থেকে। এই শাস্তিই হয়তো তার প্রাপ্য ছিল

দীপ্তি শ্রবণকে আর ভালবাসে না এমন নয় প্রতিটি রাত তারও এক গহীন অন্ধকার গহ্বর থেকে অগ্নিসংযোগ বিস্ফারিত কথামালা হতে চায় অথচ একটি প্রাণ ততটা সস্তা নয় যতটা যৌনতা। অতএব নির্জনতা জেঁকে বসলেও, শ্রবণের পাগলামো আর দীপ্তির অগ্নুৎ্পাতের মাঝে যে শিখাটি দগদগে ঘা-এর প্রাচীর হয়েছে তা কবেও নেভার নয়...

 

 

No comments:

Post a Comment