বাক্‌ ১৫০ ।। অনিকেশ দাশগুপ্ত

 

ছায়া

 

 

যেন চেতনায় দেখি আমারই খোলসের দীর্ঘ শতক 

রোদ্দুর ঠিকরান বিজেতার ট্রফিগুলির মতো

 

বেঁচে বর্তে থাকা উদ্ভিন্ন আঙুলে অদৃশ্য সুতলি 

গেঁথে বসে গেছে শিরা কল্লোলের বিভ্রান্তিস্বরূপ 

 

সমস্তই আঁচড়ে খুবলে ফ্যাকাসে স্তনে গড়ে নিই রোদ

সূক্ষ্ম মৃত্তিকার ভান চোখ তোলে ধীরে-ধীরে

 

কৌতূহলী সাইকেলের ঝিলিক যুগান্তের সেতু থেকে

ফিরে আসে ওই উচ্চকিত বৃন্তে 

 

সঙ্গী-কলহের ভস্ম মাখা সে বুনো ফুলের তাঁত –

অসহ দুপুর-জ্যোতিষ্কের কাঁধে দর্পে ফেটে পড়ে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্বর্গের চেকার্ড সিঁড়ি এই অবধি পেতে দেওয়া 

দৃপ্ত সাদা মেঘের আঁশ আর অথৈ আঙুর উদ্যানের বর্তুলে

 

অপারগ আত্মার চৌষট্টি খোপ

আশ্চর্য সমাপনের ছবি টাঙানো গির্জা-দেয়ালে

 

দংশনে ভীত বিশপ তার নিষিদ্ধ শব্দকে,

ন্যাতানো আলোর ছোপ গুলিকে 

                         একে-একে মুক্তি দিয়ে যাবেন

 

বৃদ্ধা মাতার ত্রস্ত অভিবাদন ,ডাইনিঙের প্রশস্ত ছায়া

অসাবধানী কণার মতন সময়কে বিপরীতে ছোটায়

বুকে পুরনো পাথরের তেজ অনুধাবন ক’রে 

 

 

 

 

 

অসংলগ্ন আমি তোমার ছায়া মাড়িয়ে যাই

দূর কল্পিত বিদ্যুতে,তেজাধারে

 

নখের উগ্রতায় ঝলসে 

তারার বিবর্ণ অস্তি এখানে রয়ে গেছে

 

সশঙ্ক মিছিলে আবৃন্ত গোলাপ-মর্মরিত উদ্যান 

প্রশাখার নরম সাঁঝবাতি , আমায় ঘিরে ধরো

 

হর্ষ-কূপে তলিয়ে যেতে-যেতে  

চোখের বেড় কেমন শান্ত হয়ে আসে

 

মিহি মোলায়েম সূর্য-স্মৃতি , পোড় খাওয়া পাতায়

মেলে ধরা প্রেম-পরম্পরা

জলের তির্যক রশ্মির প্রতিটি ছোঁয়ায় আলগা হয়

 

শঙ্খপৃষ্ঠার কামনা মেনে অন্ধকার কৌচে ফিরে আসি

প্রোথিত শিকড়ে,নিসর্গে অপূর্ণ দিন যেভাবে জেগে থাকে

 

 

 

আকাশ-নীল কাচে বসে থাকা কোনো ফড়িঙের মুগ্ধ লাল নয়

সময়ের গোরস্তানে আত্মার ডিঙিগুলি এসে ভিড়েছে

 

চাঁদের পাশ কাটিয়ে উড়ে যাওয়া সেসব সাবধানী কৌচ

বিমানের তীব্র গুটি ছিঁড়ে, লক্ষ -লক্ষ অপ্সরা দখল নেয় তার

 

চ্যুত নক্ষত্রের ওম ঘিরে প্রবল এই গৃহবাসনা দপদপ করে 

বালির গা চিকচিক ক’রে ওঠে সে বিশ্বাসে,দর্পে 

 

মৃত কুমীরের চিহ্নিত হাঁ পেরিয়ে খ’সে পড়া স্তব্ধ বোতামে

সময়ের উল্টো প্যাঁচ

 

সমুদ্রশঙ্খের অবগাঢ় নিঃশ্বাসে ডানা মেলা 

প্রাণের নীরব পাপড়ি যেখানে সঙ্গম-তৃপ্ত নুন রেখে যায়

 

 

 

ঈশ্বর সূর্যের বিকশিত কোণ,ধুলো রেণু আমাদের চোখে

নিমজ্জিত ক্রিমসন উল্লম্ব পর্দাগুলির ভাঁজে 

শতাব্দীর নৃত্যশালা এহেন ব্যাপৃত 

আলো ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই 

মৃত্যু ঘেরা টিলার দিকে শিউলি আঁকা পথ

উত্তরায়ণের ঘুলঘুলি পেরিয়ে রোদ্দুরের সরাইখানা 

সুতোয় জড়িয়ে ফেলা যত সাদা-কালো বন 

নগ্ন যন্ত্রী , দূরের রঙে ছোপানো কাঁচা তন্তু 

মথের গায়ে চিরায়ত বনভোজন 

অন্ত্যজ রোঁয়ার বারোমাস্যায় অনন্ত ধুপছায়া  

 

 


4 comments:

  1. ভীষন ভীষন শক্তিশালী কবিতা।

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো। বার বার পাঠ করার ইচ্ছে জাগে।
    "মনে দাগ কাটে অপারগ আত্মার চৌষট্টি খোপ

    আশ্চর্য সমাপনের ছবি টাঙানো গির্জা-দেয়ালে"

    ReplyDelete
  3. সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী23 November 2021 at 21:40

    একে মহাকবিতা আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

    ReplyDelete