অর্থনীতি
যদি হও সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন...
কানে বাজছিল
ভবানীবাবুর কথাগুলো। চোখে ভেসে উঠছিল পঁচিশ বছর আগের ক্লাসঘরটা। বাংলার ক্লাস
নিচ্ছেন ঋজু চেহারার ভবানীবাবু। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁক পেলেই প্লেন লিভিং হাই
থিংকিং-এর মাহাত্ম্য প্রচারের বাতিক ছিল যাঁর। লাঙল না টেনে কলম টানছি আজ এই
মানুষটার সুবাদেই।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা থুত্থুড়ে লোকটাকে তাই কেমন
অচেনাই ঠেকল আজ।
হিসেব করে দেখলাম সেদিনের ভবানীবাবুর বয়সটায়
এসে দাঁড়িয়েছি আজ নিজেই।
রাস্তায়
দেখা হতে কথায় কথায় তুলেছিলাম দেবোপমদার কথা। স্যারের বড় ছেলে। একটা জুয়েল।
এখন অস্ট্রেলিয়ায়।
কী বলো তো। খবর
পেলে ক্রিয়াকর্ম করতে আসবে। কিন্তু শেষবারের মতো চোখের দেখাটুকু...
মানুষটার
শরীরের হাল দেখে আরও কিছুকাল বাঁচার আশ্বাসও দিতে পারছিলাম না। ঠাট্টার মতো শোনাত
নিজের কানেই। প্রসঙ্গটা ধামাচাপা দিতেই পেড়েছিলাম নিরূপমের কথা। ওঁর ছোট ছেলে। এটা-সেটা
ব্যবসায় কসুর করেনি চেষ্টার...
কয়েক
মুহূর্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন ভবানীবাবু।
টের পাচ্ছিলাম ঢুকে পড়েছি আর-একটা
অস্বস্তিকর প্রসঙ্গে। তখনই...
হাতের ঘড়িটা
ক’দিন পরছ অমিয়?
একটু
ভ্যাবাচ্যাকা লাগলেও বলি, তা বছর দশেক তো হবেই স্যার...
তবেই
দ্যাখো, ফোকলা হাসেন ভবানীবাবু, এই দশ বছরে তোমাকে আর-একটা ঘড়িও বেচতে পারেনি
কোম্পানি। আবার সামর্থ থাকলেও তত দামের ঘড়িও কেনোনি তুমি যাতে দীর্ঘমেয়াদি খরচ
পুষিয়ে যেত তাদের...
নীরবে
তাকিয়ে থাকি।
বলে চলেন
আমার শৈশবের শিক্ষাগুরু, তাহলে আর আমাদের শেষ বয়সে দেবোপমদের থাকা চলে কীভাবে দেশে?
আর নিরূপমদের ব্যবসাই বা জমে কোত্থেকে...
আমার কানে
বাজছিল ভবানীবাবুর কথাগুলো। চোখে ভেসে উঠছিল পঁচিশ বছর আগের ক্লাসঘরটা...
সমাজনীতি
চরকা কেটে দেশ স্বাধীন হয় না,
ধোঁয়া ছাড়ে দেবাঞ্জন, আর অ্যাটলি নিজে মুখেই কনফেশ করে গিয়েছিল যে বোসের জন্যই পালাতে
বাধ্য হয়েছিল ওরা।
একজ্যাক্টলি,
রিভলভিং চেয়ারে মাথা হেলিয়ে বসেছিল সুশোভন। সোজা হয়ে বলে, তুমি না খেয়ে মরতে বসলে সিঁটিয়ে
যাব তো আমি ভয়ে! পিরিতের নাগর তো!
ব্রিটিশের
সঙ্গে পিরিতিই ছিল বুড়োর, কাগজে আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে চোখ তুলে তাকায় মিঠুন, যেই
জমে উঠেছে আন্দোলন অমনি উইথড্র করে নিয়েছে বারবার। কেন? উত্তর দাও।
আর
উত্তর, আড়মোড়া ভাঙে দেবার্ক, বোস না থাকলে...
ইলেকট্রনিক্সের
ফ্যাকাল্টি রুমে জমে উঠেছিল আলোচনা। ক্লাস হচ্ছে না আজ চারদিন। কুড়ি তারিখেও
স্যালারি না হতে গোটা কলেজের ফ্যাকাল্টিরা মিলে সোমবার বিকেলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল
পেন ডাউনের। তা আজ হয়ে গেল শুক্রবার। পরপর দু’দিন ছুটি আছে সামনে। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মিটিং-এ বসার কথা লাঞ্চের পর।
দেখা যাক।
সমস্যাটা যদিও নতুন
নয়। পুজোর পর থেকেই প্রতিবার শুরু হয় ম্যানেজমেন্টের বদমাইশি।
হইহল্লার
মধ্যেই ঢুকল মেকানিক্যালের মনোজ। অল্পবয়সি ছেলে। রগচটা। কোনওরকম ভূমিকার পথে না হেঁটে শুরু করে, এভাবে
হবে না সুশোভনদা। ক্লাস হল কি না-হল কিস্যু যায় আসে না ম্যানেজমেন্টের। এরা চেনে স্রেফ টাকা। মিটিং-এ
বলব আমি। কোর্টে যাওয়া উচিত সবাই মিলে...
নিমেষে
সব ক’টা মাথা ঘুরে যায় মনোজের দিকে।
ক্ষণিকের
নিস্তব্ধতা।
দেবাঞ্জন
হাসে, বসো মনোজ। ক’টা কথা বলি...
বসতে
আমি আসিনি। বুঝতে পারছি আমার কথাটাও পছন্দ হয়নি আপনাদের।
পরিস্থিতি
বুঝে ডিসিশন নিতে হয় মনোজ, ধোঁয়া ছাড়ে দেবাঞ্জন, সারা মাস লেবার দেওয়ার পর খুবই লেজিটিমেট
তোমার এই আউটবাস্ট। কিন্তু...
কিন্তু
আপনারা এত গান্ধিবাদী হয়ে উঠছেন কেন সেটাই বুঝছি না। কম্পিউটার সায়েন্সের প্রসূনদারাও কোনও উৎসাহ দেখালেন
না।
ম্যানেজমেন্ট
অনেক শক্তিশালী মনোজ, মুখ খোলে মিঠুন, তলোয়ার নিয়ে পারবে না তুমি তাদের সঙ্গে।
লুক
হিয়ার, হাই তোলে দেবার্ক, পারসোনালি আমি হতেই পারি সুভাষ বোসের ফলোয়ার। কিন্তু সবাইকে
নিয়ে এগোতে চাইলে এক্সট্রিমিস্ট হলে চলে না...
সেই
পথটাই নিয়েছি আমরা, গদিতে ঢুকে যায় সুশোভন, যাতে খানিক নাজেহাল হয় ম্যানেজমেন্ট।
আবার বড় কোনও স্টেপও না নিয়ে বসে আমাদের এগেনস্টে। সবারই সংসার আছে এখানে...
শিক্ষানীতি
পিতাপুত্র, ১৯৯৭
আমাকে শুধু দুটো কথা বুঝিয়ে দাও। হিস্ট্রি নিয়ে কেন পড়তে চাইছ। আর সমাজের কোন কল্যাণে লাগতে পারবে আশা করছ ভবিষ্যতে হিস্ট্রি
পড়ে? বুঝিয়ে দাও। কোনও বাধা দেব না...
মানে...
ভাল লাগে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে জানতে...
গুড।
তার মানে দেশের কথা, মানুষের মঙ্গলের কথা ভাবো তুমি। তাই তো চাই। তোমাদের হাতেই
গড়ে উঠবে নতুন ভারত। দ্যাখো, তার জন্য নিজের সময়ের দাবিটা আগে বুঝতে হবে
তোমায়। পরাধীন দেশে তোমার মতো ছেলেমেয়েরা কেন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গান্ধিজির ডাকে,
নেতাজির ডাকে? সেদিন সেটাই ছিল সময়ের দাবি। আবার আজ বদলে গেছে যুগের দাবি। গ্রামে
ডাক্তার নেই। সাপে কামড়ালে মানুষ ছুটছে ওঝার কাছে...
দম্পতি, ১৯৯৭
আমার ভয় ছিল। শেষ অবধি বোঝাতে
পারবে তো তুমি ছেলেকে...
পালস
বুঝতে হয়। হাজার বার বলেছি তোমাকে। সব জায়গায় জোর খাটাতে যেও না। মাথা খাটাও।
আমি
তো কথা বলতে পারি না তোমার মতো।
শেখার
চেষ্টাও করোনি কখনও।
কিন্তু...
আবার
কী হল?
না,
আবার পাশ করে গ্রামে যাওয়ার কথা বলছিলে তুমি...
উফ,
তুমিও না... হাহা। মেডিকেল কলেজে দু’ বছর কাটাতে দাও। ভোলই পালটে যাবে...
পুত্র ও জনৈক ইতিহাসবিদ, ২০১৭
...পেটোয়া হিস্টোরিয়ানদের চিনে গেছে
আজ মানুষ। বুঝলেন তো! সময় এসেছে সাভারকার, শ্যামাপ্রসাদদের অবদান নিয়ে চর্চার। সত্তর বছরের বিকৃত ইতিহাস আর মুসলিম তোষণের...
দেখুন,
সমাজে একটা আলাদা সম্মান আছে আপনার। নিজেকে অশিক্ষিত ভক্তদের স্তরে নামিয়ে নিয়ে
যাবেন না। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকার ইতিহাসটা জেনে কথা বলুন...
মুসলমান
আর স্বাধীনতা সংগ্রাম! হাহা! শুনুন, বাপু নয়, এটা বাপের জমানা।
জানি।
পুরাণকে ইতিহাসে মিশিয়ে দেওয়ার জমানা। নাম শুনেছেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদের?
ডাক্তারি
পড়েছেন আপনি? বিজ্ঞান? এত বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব দেখাবেন না। কোন মেরিটের স্টুডেন্টরা পড়তে যায় ইতিহাস সেসব আর জিজ্ঞাসা
করলাম না ভদ্রতার খাতিরে। কংগ্রেসের পয়সায় গালগল্প লিখে তো চালিয়ে দিলেন সত্তর বছর...
"হো হো কামাল, তুনে কামাল কিয়া ভাই"
ReplyDelete