বাক্‌ ১৫০ ।। তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়


 

জগজ্জরাকাল

 

বোঝাই গিয়েছে কবি অরুন্তুদ ঠাপে বাস্তবতা

গুঁজে দিয়ে ফিরে যাবে জগতের ল্যাজা-মুড়ো ভেঙে।

তৃতীয় পৌরুষ ক্লিষ্ট, উচ্ছন্নে পাঠাই তার স্থিতি;

আমার পশুকে আমি নিজেই নাচাতে শুরি করি।

পর্দা বিদারণে রক্ত; ও মা! ও মা! জগৎ খুলেছে।

জগৎ দপ্‌দপ্ করে অবতার কোলে তুলে আজ।

পর্দা ভেঙে গেল, দেবি! জন্তুভারতের সূচনায়

ক-অক্ষর ধ্বনিমাংস ছিল ঠিক যেমন দুর্জ্ঞেয়,

তুমি তো ভালোই জানো, এখনও তেমন দশা জেগে।

জরা নির্বাচনে আমি শরীরের অধিক কিছু-না;

শব নির্বাচনে আমি না-পোড়া নাভির সূত্রধর।

বোঝাই গিয়েছে এই শ্রীতমোঘ্ন বরাহশর্মণ

চোদনে আত্মার ব্যাপ্তি খুঁজে পেয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

উলুধ্বনি থেকে যাত্রা শুরু করে মায়া মর্দনের

বিকট শব্দের দিকে পা যত এগোচ্ছে ব্যাভিচারে,

দেবত্বে বিশ্বাস তত কমে আসে; ভৌতিক সময়!

চালাকি যে ধ্রুব মানে, আমি তার আমরণ চ্যালা।

শৈলীই বিষয় জেনে কাঠামো যে ঐশিক বুঝেছে

তার বিছানায় আমি সর্বস্ব উজাড় করে আসি।

সর্বস্ব গতায়ু? তবে আত্মবোধে এত অগ্নি কেন?

নৃমুণ্ড বিষাক্ত ফল জানি, তবু মাথা সুশোভিত

রাখার প্রয়াসে শ্রী, ধী সমস্ত খসিয়ে বসে আছি।

নাড়ি কর্তনের ধ্বনি মনে পড়ে স্খলনের আগে?

‘সন্তান’ অলীক শব্দ, বস্তুত তা রমণের ক্বাথ।

অতিরিক্ত মনে হত আগে যে শিশ্নের ভোঁতা স্থিতি,

দক্ষ নখে তাকে আজ সারল্য জ্বালিয়ে দিতে দেখি।

ও আমার মুগ্ধ-মুগ্ধ কাব্যকৃষ্টি স্বপ্নলোভাতুর!

ও আমার দম্ভ, কাম, হত্যা-ইচ্ছা পিতার দয়ায়!

ও তোমার বিবমিষা গীতিকবিতার দশা দেখে!

ও তুমি গৃধ্রের চঞ্চু! বৃক্ষভারতের ছাল খাও।

বৃক্ষভারতের পেটে কোটি কোটি অনঙ্গ বালক

স্বখাত-সলিলে ভাসে। শাসকের মুণ্ডপাত করে।

করে মুণ্ডপাত, করে অতি সর্বনাশ নিজ-নিজ।

কে শত্রু, কে বন্ধু কিছু বোঝে না, সকলই মায়া মানে।

মায়ার গতরে মেদ থলথলে মেঘের মতো দোলে,

মায়ার ভাতার হয়ে পিঠে দেখি খঞ্জর গেঁথেছে।

খঞ্জর ধাতুর লিঙ্গ, পিঠে বুঝি হত্যাযোনি ছিল?

পর্দা বিদারণে রক্ত; ও মা! ও মা! জগৎ উপুড়।

কৌমার্য হারানো এই। ব্যথা থেকে ব্যথায় গমন।

বোঝাই গিয়েছে কবি এ-মুহূর্তে কালের স্যাঙাত

(স্যাটা ভাঙা মার খেলে ক্ষমতার পায়ে চুমু দেবে)।

ভয়ের ভিতরে কারা প্রেম খুঁজে সত্ত্বগুণী সাজে?

অতিজীবিতের ভঙ্গি। অন্তে বোকাচোদা প্রমাণিত।

মরে যাচ্ছি গুপ্তরোগে। খুলে কাকে দ্যাখাব অসুখ?

পথ্যের কুহকে ক্রমে পথ থেকে সরে গেছে আয়ু।

স্নায়ুর ভিতরে যাতে নক্ষত্র ফুটিয়ে দিতে পারি,

ভবিষ্যতে নুড়ো জ্বেলে শ্রীতমোঘ্ন বরাহশর্মণ

বর্জ্যামৃত খাবে ভেবে জিভেরও সুন্নত করিয়েছে।

জিভ কার ভগাঙ্কুরে ঘোরে ফেরে বক্র গতিপথে?

ত্বরণে ত্রিভুজ ভেঙে কার স্রোত হু-হু নেমে আসে?

যে আজ আমার শয্যা রাক্ষসীজন্মের প্রথামতে

আর্তবে পোড়াল, তাকে কতখানি অন্তরে পেয়েছি?

আমাকে সে খাদ্য ভেবে যদি গিলে নিত ধীরে ধীরে,

জন্তুভারতের পাশে বৃক্ষভারতের আয়ুষ্কাল

ধ্বংসের মুহূর্ত তার পেটের ভিতরে দ্যাখা যেত?

সূর্যাতিসূর্যের মৃত্যু, চন্দ্রাতিচন্দ্রের জন্মক্ষণ

ছোঁয়া যেত ক্লীব হাতে শ্মশানে ও শীতল আঁতুড়ে?

অথচ সে খাদ্য নয় খাদক বুঝেছে ব’লে তাকে

গলাধঃকরণ ক’রে উদ্‌গারে শোকের বাষ্প তুলি।

তুলি হাড় মজ্জাহীন, তুলি স্মৃতি কৃপাণুবেষ্টিত।

আমার পশুকে আমি নিজেই নাচাতে থাকি রোজ,

রাক্ষসীর স্তন ভেবে কাঁপে পশু বমনে বমনে।

বমনে উঠেছে গৃহ; রমণে কি সন্ন্যাস প্রত্যাশা

ক’রে এই বেঁচে থাকা? পশ্বাচার এমনই সরল?

একেই বিদ্যার মণ্ড বানিয়ে নিজের মুখে ঠেলে

সম্প্রদান ভেঙে দেব—এমন সাহস নেই আর।

বোঝাই গিয়েছে কবি শুধুমাত্র লেখার সময়ে

প্রবল হারামি; তার কন্দরের দানবকৃষক

তখনই সক্রিয় শুধু। বাকি ক্ষণে সে-ও ম্রিয়মাণ।

অথচ না-লেখা-ক্ষণই লেখার জরায়ু, অণ্ডকোষ।

ভয়ের ভিতরে শুধু ভয়ই আছে, অন্য অনুভূতি

ভ্রমের কাঠামো— একে, ন্যাকাচাঁদ, আশ্রয় মেনো না।

বোঝাই গিয়েছে একা জন্তুভারতের কম্ম নয়

নরক জাগানো, লাগে বৃক্ষভারতের ছায়া, জল।

রিপুবাহকের গ্রহে যে-ই হবে চৈতন্যদ্যোতক,

তার মাংস ক্ষণস্থায়ী। তাকে খেয়ে তাকেই দেবতা

বানিয়ে বিস্মৃতি দিয়ে হবে তার অন্ত্যেষ্টি নির্মিত।

ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হিতাকাঙ্ক্ষী মৃত্যুকামুকতা!

ও আমার জিজীবিষু কীটদষ্ট আগা-পাশ-তলা!

ও আমার মন্দ-মন্দ বহুগামী অখণ্ড প্রলাপ!

‘আমি’ ‘আমি’ জপ ক’রে আত্মমগ্ন হয়ে গেছি ব’লে

এখনও কবিতা আসে, নচেৎ কঙ্কাল লেখা হত।

‘আমি’ ‘আমি’ জপ থেকে ইচ্ছা জাগে রতিবিলাসের।

ইচ্ছার ভিতরে গেল ভোঁতা শিশ্ন আত্মকাম ছুঁতে।

অমৃত-পুত্রের এই ক্রিয়া আজও ফলদ হল না।

শূন্যে ঝরে গেল বীজ, শূন্যগর্ভে শূন্যই গজায়।

এত যে সৃজন চাওয়া, এর তুল্য ধ্বংসকামনায়

আমাদের মন আছে? আছে কাঙ্ক্ষা সমপরিমাণ?

এখন বিলাপ নেই, জঙ্গম জগতে চিরকাল

অরুন্তুদ ঠাপ থেকে জড়তায় গতি, চঙ্ক্রমণ।

বৃক্ষভারতের মোহ এখনও নির্মেদ ত্রাণ, তবু

একাকী স্বধর্ম মেনে ছিন্নভিন্ন হয়ে জেগে আছে

জন্তুভারতের দাঁতে শ্রীতমোঘ্ন নরকশর্মণ।

 

5 comments:

  1. কিছু টাইপো আছে তবুও পড়তে অসুবিধে হয়নি।১৮ মাত্রার পয়ার। ছন্দের প্রতি এই নিমগ্নতা ভালো লাগল।



    "রিপুবাহকের গ্রহে যে-ই হবে চৈতন্যদ্যোতক,

    তার মাংস ক্ষণস্থায়ী। তাকে খেয়ে তাকেই দেবতা

    বানিয়ে বিস্মৃতি দিয়ে হবে তার অন্ত্যেষ্টি নির্মিত।"

    সম্পূর্ণ কবিতায়, ভাষা ও তার আসঙ্গে যে নির্মাণ, তার স্পষ্টতাই আমাকে আপ্লুত করল। এই কবিত্ব। ধোঁয়াশা ও ধোঁয়াটে কিছু ছেড়ে রাখেননি। ঋজু, সটান। শুভেচ্ছা জানবেন। 🌹

    ReplyDelete
  2. প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার

    ReplyDelete
  3. জিভ কার ভগাঙ্কুরে ঘোরে ফেরে বক্র গতিপথে।

    ReplyDelete