বাক্‌ ১৫০ ।। সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়


 

জার্নাল

 

১.

 

স্নায়ুধূম লোকায়তে মলয়ের প্রবাসিনী মাতৃস্বর
কান্না নিয়ে আসে।
যাকে কাঁদন বলে একবার ডাকলেই
পাড়াভর্তি দু-পেয়ে তিন-পেয়ে এবং চার-পেয়ে
সভ্যতা ব্রতচারী উল্কাপিন্ডের মতো জ্বলে উঠবে
যারপরনাই।

এটুকু সাধ্য ছুড়ে দিলেই বাজীকরের ঝোলা টম্বুর।
পরিচ্ছেদ-ভুক্ত হলে জ্যোৎস্নারও চাঁদোয়া সরে যায়।
তখন তুমুল মতে জড়াজড়ি
অবশ্য একটু পরেই
ঔপনিষদিক সাম্পানের এলোপাথাড়ি
সাবেক ছুরিকাঘাত কতটা দগদগে হতে পারে সে-কথাও,
মুহূর্তে তুলে আনে-
আহা, সে পঙ্কিলেও সুধাবাষ্প নিধিফুল হয়
আর ঘ্রাণে তার পরিচয় পেতে পেতে বাজীকর মাথাটি নোয়ান্ যেই,
বহুগামী শারদপত্রিকায় শঙখ উলু কাঁসর ঘন্টা
তেতে ওঠে;
ব্যস্ততম জ্বালানির ঠেলা খেয়ে জগৎসংসার ছোটে,
খোঁড়ে ঊর্ধ্বমুখী।

শোঁ শোঁ শব্দে মলয়ের ছোট্ট হাঁড়িকুড়ি এবং হাতাখুন্তিহীন আরও তৈজসের হাকুচ কালো তেরাত্তির
 

যত না জুড়োনো ছিল তার চেয়ে বেশি কামড়ে ধরে উল্লসিত অহং ছিটকোয়
যত ভ্রমণসুখ অভিনিবেশ আঁকড়ে ধরে হাতের পাঁচে
 

পায়ের পাঁচে সাতের পাঁচে কুঁকড়ে বসে আঁকড়ে ধরে 

গুটিয়ে শোয় নিংড়ে নেওয়া নিংড়ে দেয় ছিবড়ে হয় অনাদিরাত ধূমকাতর ছিবড়ে হয় ছিবড়ে হতে থাকে...

 

 

২.

 

লেখালেখি কোনও কালে
তেমন সুবিধের জিনিস নয়।
তাই আজকেও ওসব মহাকাশফুলের দিকে
না তাকিয়ে কাটিয়ে দেবো।
তত্ত্বের মসীকান্না কথার মাঝখানে বড় কথা কাটে,
তাকে বাজারে পাঠালে সদ্য ভূমিষ্ঠ মুদিখানাও
পাত্তা দেয় না।
অতএব রাতের দিকে রুটির দ্বন্দ্বে চাকি বেলনের
গলনশীল নাক,
হাইড্রেনের নেকনজরে না আসাটাই শ্রেয়তর।
সঠিক আপিসঘরে সঠিক বন্ধুত্ব পাতানোর স্কিল
জুড়ে লেখার ভাসান দেওয়া চলে।
একমাত্র তাহলেই মুচকি গহবর তোলপার করে
তার বছর বছর ফিরে আসাটাও একইভাবে
লিখে ফেলা যায়।
আমার হিসেবে মজাদার ভুল ছিলো।
চাকরগিরিতে কোনও যোগাভ্যাস না রাখলে
মোটরহীন পদচিহ্নে দুঁদে গোয়েন্দারও কোনও
আগ্রহ থাকে না--
তুমি বোঝাতে চেয়েছিলে বারবার।
আজকে যার ঘরে গিয়ে শান্তিপালন করো,
আমার লেখা চিঠিপত্র তার মারফত পেয়েছিলে।
সে সব আক্ষরিকতা পছন্দেও কোনও খামতি রাখোনি বেলাবেলি।
এমনটা অবশ্য অনেকরই হয় তাই
বিশেষ বেঞ্চের পায়া জড়াজড়ির অজুহাতও
ধোপে অকুলান।
সেই থেকে ছাপাশাড়ির জমিজমাদের
আমি চমৎকার ভয়ের সঙ্গেও,
একেবারে মিশতে দিই না।
আমার লেখাপত্র আমার নামের একটা বানানও
জানতে পারবে না কোনওদিন
কারণ তোমার কথামতো তাতে অন্তত, বাংলাভাষার ক্ষত নেই।


৩.

 

সাত-আটদিন পরপরই সেভিংস অ্যাকাউন্টে
একটা করে ঠোঁট, সর্দি টেনে নেওয়া নাক
আর রসিক পালক জমা পড়ে।
সে অংক দেখে তৃপ্তি হয় তবে ছোঁয়া যায় না বলে
নানাবিধ তাবিজের অহংকার ঝাড়াই বাছাই।
ফি-হপ্তা হত্যে দিয়ে অগ্ন্যাশয় সার্টিফাই করিয়ে আনতে
গেলে জোটে শুধু সলিডপাঁচালি;
লিটার পিছু বাহবা'র সন্ন্যাস-চাহিদা এত বেশি যে,
 

সপ্তাহান্তে উজ্জ্বল আত্মহননগুলো খসড়াতেই বাতিল
হয়ে যায়।
অগত্যা যৌথগলাটেপাটেপি চলে।
মায়ের আপদ বলে খসে পড়ি অহরহ,
বাপের গলগন্ড বলে ঢলে পড়ি সমারোহে,
বোনের নিষ্কর্মা বলে ঝরে পড়ি শৌচাগারে,
ভাইয়ের অধমর্ণ বলে নুয়ে পড়ি শিষ্ট হাড়িকাঠে।

অতিকায় উত্থিত একলা লিঙ্গছাঁদ অক্ষরে অক্ষরে
দলাইমলাই করে আজ দেখি শ্রীমদ্ভাগবত,
রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো রোগাসোগা সারথী'টি অনায়াসে
বলে দিচ্ছে, "একা আপনাকে নিয়ে অতদূর গেলে পোষাবে না, আরেকজন হোক।"

এটুকু শোনার পর সমুদ্রনীল ধুধু বিছানার দিকে তাকিয়ে
যদি একটু হাসি খরচ করি,
নিদ্রা সম্প্রচারে খুব বিঘ্ন ঘটে যাবে প্রভু?

 

2 comments:

  1. গভীর স্তরবিন্যাস। দারুণ

    ReplyDelete
    Replies
    1. শ্রদ্ধা নেবেন দাদা!

      Delete