রোপন
খেতের মধ্যেই হাঁটছিল মেয়েটি।
নীরব। একাকী। পবিত্র মাটি। বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার মুখে। সারাদিন ধরে হাসিমুখে চাষির
পরিশ্রমের ফল। এ ফসলের জননী হতে পেরে যেন মাটিও গর্বিত।
নিজের ভেতরের
বীজে মেয়েটি চিন্তিত। এ বীজ বপন করা হয়েছে ওর মধ্যে জোর করে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে উঠেছিল। কেঁদেছিল। ছাড়েনি বলবান চাষিরা।
গভীরে ছড়িয়ে পড়ছে
বীজটার প্রাণ। বিস্তার দ্রুত। সমূলে টেনে ছিঁড়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব। মাটির পবিত্রতা মেখে
নিতে হাত বাড়ায় মেয়েটি। শুরু হয় বাতাসে ফিশফাশ...
আয়নার ভেতর আমি
আমার সামনে এসে সে দাঁড়াল। বলল, সমস্যাটা কী।
বললাম, অনেক। বলে কী
হবে। সমাধান নেই।
ফোনটা রিং হল।
ধরলাম না। বেজে বেজে থেমে গেল। নিশ্চিত হলাম।
এবার সে বলল, এতদিন তো লড়েছ।
এতগুলো বছর। মুখের কথা নয়।
—তখন শক্তি ছিল।
আশা ছিল। ভরসাও। ‘ও’ ছিল।
—সত্যি কি ‘ও’
ছিল বলেই লড়েছিলে তখন? আমার তো মনে হয় নিজের জন্য লড়েছিলে।
—বললাম তো শক্তি
নেই আর। পারছি না। পারব না।
—তুমি কিন্তু
সংগ্রামী মানুষ।
—এসব বলে লাভ
নেই।
আবার ফোনের রিং।
যথারীতি ধরলাম না। এবং কেটে গেল।
সে আবার শুরু করল, এই করোনা, লকডাউন, সবকিছুই তো
পেরিয়ে এলে। তখনও তো টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। রোগ, মহামারী ভয় ছিল।
—তখন চাকরিটা
বেঁচে ছিল। ‘ও’-ও সঙ্গে ছিল।
—চিরকাল কি
সবকিছু, সবাই সঙ্গে থাকে!
—থাকার ইচ্ছে
থাকলেই থাকে।
—তাহলে তো আমিই
একমাত্র জন্ম থেকে তোমার সঙ্গে ছিলাম।
—কে তুমি?
—তুমিই বলো। আয়না
দেখতে না?
—দেখার মতো
পরিস্থিতি ছিল না। প্রাইভেট চাকরি। এক মিনিট স্থির থাকতে দিত না। এত করেও চাকরিটা
গেল। বাবা করোনায় মারা গেল। পাড়া, বন্ধু সব পালিয়ে গেল। টেস্ট করে নেগেটিভ হলাম। চাকরি নেই। ‘ও’ নেই...
—চেষ্টা করেছ
পাবার?
—অনেক, অনেক।
ফোন আবার বেজে
বেজে থেমে গেল।
সে বলল, আর একবার চেষ্টা
করো। এবার হয়তো হয়ে যাবে।
বললাম, অনেক হয়েছে। আর
নয়। সমাধান করে ফেলেছি। এই সব ক’টা ঘুমের ওষুধ।
তীব্র গর্জন এল, দাঁড়াও। স্টপ।
দাঁড়িয়ে গেলাম। স্থির।
আয়নার ভেতরের আমিও। নিশ্বাস পড়ছে না। হাত লেগে আমার ছিটকে পড়ল ফোন। ভেসে এল, ইউ হ্যাভ অ্যা
ভয়েস মেসেজ। ইউ হ্যাভ বিন সিলেক্টেড ইন দ্য ফাইনাল ইন্টারভিউ। প্লিজ কনট্যাক্ট আস...
দুটি গল্পই ছুঁয়ে দিল--ভিতরে।
ReplyDelete২য়টির শৈলীও কুর্নিশযোগ্য,ভাই।