মহাপ্রস্থান
ঘর
থেকে পা বাড়ালেই বাস চলা রাস্তা। সকাল এসে পড়েছে নিরঞ্জনের ঘরে। দোতলা ঘর। চিলাছাদের
উপর ডানা মেলে বসে আছে কংক্রিটের চিল। ছোঁ মারার মুদ্রা ছাড়া চিল যে অচল,
নিরঞ্জন বুঝেছিল বোধহয়। ঘরের
সঙ্গে জুড়ে আছে একটা দালান।
দালানে ময়লা তেল চিটচিটে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে নিরঞ্জন। সদ্য
ষাট পেরিয়ে যাওয়া অথচ মানসিক দিক থেকে ফুরফুরে নিরঞ্জন। জীবন
নিয়ে কোনোদিন দর কষাকষি না করা নিরঞ্জন।
শরতের
সকালে তখনও সব শিশির মরে যায়নি।
মনে মনে মরে যাচ্ছে নিরঞ্জন। ঘণ্টা
তিনেকের ব্যবধানে মানুষটার ভেতর চড়া পড়ে যাচ্ছে। বেঁটেখাটো
মানুষ। স্বাস্থ্য
ভালোই। খালি
গা। ডান
হাতের কনুইয়ের উপর বাঁধা আছে হাজার গণ্ডা মাদুলি। লাল
উল, কালো সুতো দাগ কেটে এঁটে বসে আছে। চোখের
পাতা স্থির করে তাকিয়ে আছে সামনের রাস্তার দিকে। সাইকেল
বাস দৃশ্য ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে।
নতুন দৃশ্যের জন্ম দিচ্ছে। নিরঞ্জনের
চোখের কোনো চলন নেই।
তখনকার
দিনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রীতিমতো নিজেকে এখনও পড়াশোনার মধ্যে রেখেছে নিরঞ্জন। প্রভাস
খণ্ড তার প্রিয় বই।
তাছাড়া মহাভারত পড়ে,
টিভিতে দেখে।
সাকুল্যে তাকে বেশ সম্পূর্ণ একজন বলেই মনে হয়। গ্রামে
বিগ্রামে বিচারের আসনে তার মতামতের একটা গুরুত্ব আছে। বছর
পাঁচেক হল এই দোতলা পাকা বাড়িটা হয়েছে। দুই ছেলের একজন ব্যবসা করে,
একজন চাকরি।
ফুলে ফেঁপে ওঠা সংসার। অথচ এই নিরঞ্জনই নাকি এক সময় ক্ষুদ সেদ্ধ
খেত। সেইসব
দিনের কথা মাঝেমাঝে তার মনে পড়ে বই কি। মনে পড়লে নিজে এখন অনেকটা স্বস্তি অনুভব
করে।
সে
নিজে যেমন ভাবে, পাশাপাশি
লোকেরাও নিরঞ্জনকে খুব ভাগ্যবান মনে করে। হিংসা করে আবার তার এককালীন ত্যাগ স্বীকারের
প্রশংসাও করে। লোকে,
কেউ কেউ ওঁত পেতে থাকে ওই ঘর থেকে কোনো উচ্চগ্রামের স্বর এল কিনা!
বুঝি ঝগড়া হচ্ছে। গুমরে গুমরে অনেক কল্পনাও শেষ অব্দি তাদের
মনে কোনো বৃষ্টির ফোঁটা আনতে পারে না। তারা বলে,
সুযোগ পেলেই বলে…
‘নিরঞ্জন
বাবু ঘরটাকে আচ্ছা মেনটেন করে রাখছ…’
‘কেন!’
‘ঘরে
এতগুলা লোক। এতগুলা
পেট। এত
রুচি। যাই
হোক, টুকটাক হয় সেটা আলাদা কিন্তু এই যে একসাথে
বড় কুনো গণ্ডগোল ছাড়া দিনগুলা কাটাচ্ছ… সত্যি
তোমার পক্ষেই সম্ভব।
বাস্তবিক,
নিরঞ্জন শান্তিপ্রিয় মানুষ। আর
এত বড় একটা সংসারে শান্তি রাখার দায়িত্ব যেন একা তারই। একা
সে-ই সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে।
‘মনের
জোর আর কথার ভার না থাকলে এমনটা হয় না।’ লোকে বলে।
দুই
ছেলে একটু আগে যার যার কাজে বেরিয়ে গেছে। দুই বউমা,
নিজের স্ত্রী, বাবা-মা,
নাতি-নাতনি সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিরঞ্জন স্থির পলকে বসে আছে দালানে। কেন!
না...
আগামী
পরশু অর্থাৎ মঙ্গলবার সূর্য ডুবে যাওয়া থেকে সন্ধ্যা আসার মাঝে কোনো একটা সময়ে নিরঞ্জন
মারা যাবে। ভোরবেলার
সত্যসন্ধানী আঁধারে নিরঞ্জন গিয়েছিল বিশ্বস্ত জ্যোতিষীর কাছে। এর
আগেও অনেকবার গেছে।
তার কথা কোনোদিন সত্যি না হয়ে পারে না। এর
আগে একবার সেই জ্যোতিষী বলেছিলেন, দিন
তিনেকের মধ্যে ঘরে কেউ না কেউ সাপের কামড় খাবে। খেয়েছিল। নিরঞ্জনের
নাতি। বিকেলের
তন্দ্রাচ্ছন্ন আলোয় যখন তার খেলা তাকে নিয়ে গিয়েছিল ঘরের পেছনের কতগুলো পচা খোঁতা
বাঁশের স্তূপের দিকে, সেখানে
এক কালাচ ছোবল বসিয়েছিল ডান পায়ে।
তারপর ওঝা গুনিন শেষে সদর হাসপাতাল। আর
এদিকে নিরঞ্জন গলবস্ত্র হয়ে বসে আছে জ্যোতিষীর কাছে। সে
যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল তার নাতি।
বাড়িতে ডেকে এনে পা ধুইয়ে দিয়েছিল জ্যোতিষীর।
তারপর
একটার পর একটা লেগে থাকা কথা।
কথার মিলে যাওয়া। যাতায়াত ক্রমে ঘেঁষে ঘেঁষে থাকে জ্যোতিষীর
সঙ্গে।
আজ
ভোরবেলায়, তখনও কাক মুখে তুলেনি কিছুই,
জ্যোতিষী নিরঞ্জনের চোখে চোখ রেখে বলেছিল কথাটা। কিছু
কথা দিগন্ত অব্দি গেলে হোঁচট খাওয়ায়। নিরঞ্জন হোঁচট খায়নি। স্থির
শীতল হয়ে গিয়েছিল।
শরতের কুয়াশা হনহনিয়ে ঘরে ঢুকছে। মানুষের
সকাল হতে তখনও বাকি।
মহাপ্রস্থানের
ভাবনাও কি এমন সময়েই এসেছিল! কতখানি
নির্লিপ্ত হলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়!
হাভারত পড়তে পড়তে নিরঞ্জনের বারবার এই কথাটা মাথায় এসেছে। আজ
এই মুহূর্তে সে নির্লিপ্ত নয়, উদাসীন
নয় বরং জেদী, কিছুতেই
ছাড়বে না কোনোকিছু।
এখন
থেকেই কেউ তার দিকে নজর রাখছে ভেবে শরীরকে আরও ভারী করে তুলছে কি সে!
পাগুলো ভারী হয়ে আছে। জ্যোতিষীর উঠান থেকে নেমে আসে। এখন
সেই সকাল থেকে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে চেয়ারে। ভয় দ্বিধা জেদ কষ্ট সবকিছু তাকে পালা
করে শিস দিয়ে যাচ্ছে।
জীবনের আর কয়েকটা মুহূর্ত কয়েকটা প্রহর বাকি। বাড়ির
কাউকে জানায়নি।
কেন জানাবে? এই
দু’দিন নিজের চারপাশে ওরা হা-হুতাশ
করুক, নিরঞ্জন চায় না। তার মনের ভেতর যার যার প্রতি সাধারণ ঘর
চালানোর জন্য মালিন্য হয়েছিল তাদেরকে সে ডেকে ডেকে দেখে। গায়ে
হাত বোলায়। শেষে
কিছু না বলে তাদের যেতে বলে।
তারা অবাক বনে যায়। এমন বৈষয়িক মানুষটা কোনো বিষয় ছাড়া
অন্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক নয়। স্ত্রী,
বড় ছেলে, ছোটো ছেলে, বউমা সবাই পালা করে জানতে চায়। নিরঞ্জন
চুপ করে থাকে। দৃষ্টি
তেমনই স্থির।
জীবনের
কোন দেখাটাকে নিরঞ্জন চরম বলে ভাবছে! এখন
এই মুহূর্তে সে কী কী দেখতে চায়! নাতি
নাতনিদের মুখ! স্ত্রী
ছেলে বউমা নাকি এই ঘরটা! অনেকক্ষণ
বসে ভেবে স্থির করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তুরপুনের
মতো কিছু একটা মাথার ভেতর দিয়ে গিয়ে অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে। নিজেকে
এখন সবথেকে বেশি মেলাতে পারছে অভিমন্যুর সঙ্গে। নিরঞ্জনের
চোখের সামনে একটা বক পোড়ো জমির জল থেকে মাছ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ
নিরঞ্জনের চোখের সামনে অবিরাম একটা চাকার জটিল বর্ণময় গতি। কীসের
চাকা! কেন ঘুরছে!
কিছু ভেবে দেখার ইচ্ছেও যেন নেই তার। মৃত্যু
নয়, এই মুহূর্তে জীবনের ভাবনাই তাকে কুরে
খাচ্ছে।
এই
ঘর, নাতি-নাতনি, এই
শরতের সকাল, জীবনের ঝরে যাওয়া থেকে সজনের ফুলের মতো
সেজে ওঠা এসবের আর কোনো মানে নেই তার কাছে। এই দু’দিন সে খাবার তুলবে অনেক কষ্টে,
শুধু বাড়ির সকলকে খুশি দেখার জন্য। শেষ
পর্যন্ত কাউকে কিছুই জানাবে না, দু’দিনের
মুহূর্তগুলো রেশমের মতো গোপন রেখে।
নিরঞ্জন
তার ছোটো বোনের বিয়ে দিয়েছিল খুব কাছেই মাধবপুর গ্রামে। পরিবারের
বাইরে এই একজনকে সে খুব ভালোবাসে।
অনেকদিন দেখেনি, দেখতে
ইচ্ছে করছে বাহানায় তাকে ডেকে আনে।
দু’জন পাশাপাশি বসে।
‘তুই পরশুদিন
অব্দি থাকবি ত?’
‘ধুর…
মোর ঘরে কি কাজ নাই! গরু
দুইতে হয়। ঘাস
কাটা আছে। সে
কাজে যায় ভোর থিকে বেরিয়ে।
থাকলে কী করে হবে বল!’
‘কী আর
করা যাবে…’
নিরঞ্জন
আর বেশি জড়ায়নি।
সত্যিই তো, তাকে
আটকে রাখা যায় না।
কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যুর কাছে এসে মানুষ বোধহয় আরও বেশি শিশু হয়ে
যায়।
দুপুরে
খাওয়ার সময় দুই ছেলেকেই শুনিয়ে শুনিয়ে নিরঞ্জন পূর্বদিকের নতুন কেনা জমিটার কথা
বলে। অনেকদিন
হল কেনা হয়েছে অথচ রেকর্ড করা হয়নি। দিন দুয়েকের মধ্যে যদি করা যায়,
ভালো হয়।
আরও এমন নানান কথা। নিরঞ্জন সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে
চাইছে। সংসারে
থেকে যাওয়ার আতুরতা আর চলে যেতে হবে এই দুয়ের দ্বন্দ্ব তাকে পাগল করে দেওয়ার আগে
সব ঘুঁটি সাজানো হোক, চায়
সে। একই
কথা বারবার করে সে বলেছে।
জনে জনে বলেছে।
কেউ তাকে পাগল ভাবছে না যদিও। কেউ
তার এই অসংলগ্নতা নিয়ে প্রশ্ন করছে না। সবাইকে নিয়ম মতো বাঁচতে হবে। নিজের
মতো করে। বৃহস্পতিবারের
বারবেলার পর থেকে তার পরিবারের কাছে সে থাকবে না। পেছনের
গাছগুলোতে তবুও যেন জল দেওয়া হয় নিয়মিত। নিরঞ্জন পই পই করে দু’ বউমাকেই বলেছে
মিলেমিশে থাকতে।
টুকরো টুকরো খড় নিয়ে যাওয়া একটা ঠোঁট নিয়ে পাখিটা স্থির হয়ে
বসল ঝরে যাওয়া সজনে গাছটার ডালে।
সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল নিরঞ্জন।
এইভাবে
কাটে বিকেল-রাত আর সকাল থেকে রাত। বৃহস্পতিবার
রাতজাগা চোখ নিয়ে সেই একই ভাবে বসে আছে নিরঞ্জন। কেন
রাত জেগেছিল, পরিষ্কার
করে জানে না সে।
সে তো নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জেনেও চঞ্চল হয়নি!
সত্যিই
কি হয়নি!
নাকি, নিজের
সঙ্গে ছল করতে গিয়ে এখন ধরা পড়ে গেছে!
সবকিছু
এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে লোকটার কাছে।
নিজের
ঘরের দালানে বসে আছে এটা ভেবেও তার আঁত ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসছে। ঘরের
কাউকে নিজের চোখের সামনাসামনি দেখতে পেলেই চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে কিংবা নিজের ভেতরে অনেক
ভেতরে দৃষ্টি চালিয়ে দিচ্ছে।
অনেক
ভেবে দেখল নিরঞ্জন, সংসারে
তার এটুকুই ভাগ ছিল।
হামাগুড়ি দেওয়া এই ভাবনাটা ক্রমে তাকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু
জোর ধাক্কা দিয়ে দাগ কাটতে পারে না।
আজ কিছু সময় পরেই নিরঞ্জন বেরোবে। এটা
ভাবলেই তাকে ঝিমিয়ে যেতে হয়।
সময়
যত এগিয়ে আসছে, ততই
নিরঞ্জনকে পেয়ে বসছে এক অদ্ভুত বিরক্তি। ঘরের লোকের যেন পোয়াবারো লেগেছে,
এদিকে একটা মানুষ বিকেল পেরোতে না পেরোতেই মারা যাবে,
সেদিকে হুঁশ নেই! দু’
বউমা রোজকার মতো হয়তো ব্যস্ত আছে।
ভেতরে স্ত্রী-ও
আছে। দুই
ছেলে কাজে বেরিয়েছে।
যাক।
ব্যস্ত থাকুক ওরা। ভেতরেই পড়ে থাকুক।
আমি
এই দালান থেকে আর ঘরে যাব না।
ওদের সবাইকে এখানে আসতে হবে। আর
বেশি সময় নেই। আসতেই
হবে।
অভিমান। চোখ
ছলছল করে ওঠে নিরঞ্জনের।
ওরা
তো কেউ জানে না, জানায়নি
নিরঞ্জন।
ওরা
জানলে নিশ্চয়ই তাকে ঘেরে থাকত সর্বক্ষণ।
ওরা
ভালো থাকুক। সবাই
ভালো থাকুক।
নিরঞ্জন
ঝিমিয়ে আসছে সন্ধ্যা আসার মতো করে।
পশ্চিমের
রোদ বেঁকে পড়েছে নিরঞ্জনের মুখে।
শরতের পড়ন্ত রোদ দুর্গার ছলছল চোখে নিয়ে বিসর্জনের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছে। তার
খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে একবার বাড়ির সবাইকে ডাকে। ডেকে
বলে— ‘মরণ হবে আমার।
এক্ষুণি আমার মরণ হবে।’
বাড়ির
সবাই তার কাছে আসুক।
মৃত্যুর সাথে কথা বলুক। তাকে বুঝিয়ে বলুক। নিরঞ্জন
যে এখন মরতে চায় না!
মৃত্যুর
কারণ তো জ্যোতিষী বলেনি!
কোনদিক
থেকে মৃত্যু আসবে তার!
জ্যোতিষীর
শান্ত অথচ অমোঘ মুখটা নিরঞ্জনের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চোখ
ভারী হয়ে যায়।
অজানা এক অন্ধকার থেকে জলের অবিরাম ধাক্কা খাওয়ার শব্দ তাকে চারদিক
থেকে জাপটে ধরে।
মাথার ভেতর অজস্র শিরার দৌড়ে চলার শব্দ তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে দিচ্ছে। অনেক
কষ্টে নিরঞ্জন সূর্যের পুড়ে যাওয়ার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। করুণ
চোখের ক্ষীণতা দেখে চোখ আবার বুজে আসে। আর কিছু ভাবতে পারছে না নিরঞ্জন। ভীষণ
শব্দ করে মাথায় ঢেউ উঠছে।
বালির পর বালি জমিয়ে বাঁজা করে দিচ্ছে সবুজ একটা বৈষয়িক মাথাকে। একটা
চিল তার দুরন্ত ছোঁ নিয়ে এগিয়ে আসছে নিরঞ্জনের দিকে।
ঘরের
সবাই উদ্বিগ্ন তাকিয়ে আছে নিরঞ্জনের দিকে। স্ত্রী একটু তফাতে দাঁড়িয়ে মুখে আঁচল
গুঁজেছে। মাথাগোড়ায়
দু’ বউমা। ছোটো
ছেলে একচোখ দুশ্চিন্তা নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। হন্তদন্ত
হয়ে ব্যবসা ছেড়ে দরজায় আসছে বড় ছেলে। এইমাত্র কান্না থেমেছে নাতি-নাতনিদের। তাদের
গালে শুকনো দাগ।
নিরঞ্জন
বেঁচে আছে। এখন
জানালা দিয়ে অন্ধকার ঢুকছে।
তবুও…
চিলের
ছোঁ আর এই অন্ধকারের মাঝে মৃত্যু হয়তো এসেছিল। ফিরে
গেছে।
নিরঞ্জন
বিছানায় শুয়েই আছে।
সন্ধ্যার মুখে সামান্য মাথা ঘুরে গিয়ে যে অঘটনটা ঘটেছিল,
তার থেকেও বড়সড় অঘটন ঘটে চলেছে এখন। তার
মাথায়। চেতনায়। পাশে
স্ত্রী শুয়ে আছে।
থাকার কথা ছিল না যদিও। ঘুম এলেই কোনো একটা স্বপ্ন দেখবে নিরঞ্জন। জেগে
বসবে ঘাম নিয়ে কিংবা স্বপ্নের ভেতর আরাম করে বসে স্বপ্নের গায়ে হাত বোলাবে।
এই
নিশ্বাস। কাল
সকালে নিরঞ্জন কী করবে, ভাবতে
গিয়ে আরও কিছু চিন্তা চাপ চাপ হয়ে তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। যে
কঠিন যাত্রার জন্য সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিল,
সেই যাত্রা বাতিল হয়েছে।
অনেকক্ষণ
চোখ মেলে থেকে থেকে সে অন্ধকারে ফুঁ দিয়েছে। সরের
মতো ভাবনা সরে গিয়ে আবার ঘেরে ধরেছে তাকে। বুঝেছে,
গতকাল বা পরশুর থেকেও মন খারাপ নিরঞ্জনের। একটু
বাইরে গিয়ে রাস্তায় হাঁটবে সে।
আকাশমণি গাছের শঙ্কুফুল মাড়িয়ে।
No comments:
Post a Comment