বাক্‌ ১৫০ ।। হাসান মোস্তাফিজ


 

 

১.

 

ভাই, আজকে আপনার ফার্মেসি থেকে মোট কতগুলা কনডম বিক্রি হয়েছে?

আমি দুনিয়ার সবচেয়ে নিষ্ঠুর অসচেতন মানুষদের সুন্দর সুন্দর কোটেশন বলতে/লিখতে দেখেছি। একশো ছাপ্পান্নজন আন্ডারএইজ মেয়েদের সেক্সুয়ালি হ্যারাসমেন্টকারী একজন পেডোফাইলকে জাজের কাছে লেখা একটা চিঠিতে দেখেছিলাম লেখেছেনারীদের ক্ষোভ জাহান্নামের আগুনের চেয়েও কঠিন। যদিও পরে জাজ, যে একজন মেক্সিয়ান-আমেরিকান ভদ্রমহিলা অথবা ল্যাটিনো, সেই কথার জন্যেই তার চল্লিশ বছর জেলটাইমের সাথে আরও একশো সত্তর বছর যোগ করে দিয়েছিলেন।

এই মানুষটি আর আরোগ্য হবার সময় পাবে না, যদি না সে ২০৬৮ সালের (এতদিন বাঁচবে না হয়তো, তার বয়স আটান্ন এখন) আগে একটা ভালো আত্মজীবনী, ডায়েরি বা ফিকশন না লিখে, যেটা পড়ে ওইদেশের কোনো প্রতিভাবান সাহিত্যিক মুগ্ধ হয়ে ভূমিকা লিখে না দেয়। যদি সে পারে, বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য এটা শুভ হবে না। আমার মতামত আর কি।

কুড়ি বছরের মধ্যে সে পঞ্চাশ হাজার ডলার বেতনে ফিজিশিয়ান হিসেবে চাকরি করেছে অলিম্পিক টিমের পার্সোনাল টিম ডক্টর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আর এটা আমার পার্সোনাল ফেভারিটসে একশো আটান্নজন আন্ডারএইজ মেয়েকে মোলেস্টেড, হ্যারাস করে একজন ডাহা পেডোফাইল হিসেবে উইকিপিডিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। তার আরোগ্যলাভের কোনো সুযোগই নেই।

তবে বিশ্বের মানুষের সবচেয়ে যেটায় আগ্রহ দেখলাম সেটা হচ্ছে তার ধর্ম কী।

আমেরিকায় বহুত প্রেসিডেন্ট আর এই মানুষটি একই ধর্মের।

ভাবমূর্তির কোনো জবাবদিহি হয়তো নাই এই ক্ষেত্রে।

মতিঝিল এজিবি কলোনি, আইডিয়াল জোনে আমার দেখা মতে, মোট চারবার বিয়ের অনুষ্ঠান হতে দেখেছি এই মাসে। যেই বিল্ডিংয়ে থাকি সেখানকার একতলার মিসেস সাইফুল্লাহর ছোটভাইয়েরও কয়দিন আগে বিয়ের অনুষ্ঠান হল, দাওয়াত খালি পেয়েছিলেন বাবা, যাননি। মাস শেষ হয়নি এখনও, আরও বিয়ে হয়তো হবে।

ফার্মেসির ভদ্রলোক মনে হয় আমাকে ঘুষি মারবার স্বপ্ন দেখছে সে আমার চেয়ে দুই ইঞ্চি খাটো, নাক বরাবর মারবার ইচ্ছা তাকে দমাতে হবে। আমি চাইলে আমার নাকটা দুই ইঞ্চি নীচে নামায় তাকে আত্মিক শান্তি দিতে পারি কিন্তু কেন এমন করব?

যে হিসাব রাখে মালপত্রের সে ভাত খাইতে গেসে, ওয়েট করেন, আসলে জানায় দিব।

আপনি কীসের লোক?

সাড়ে চার বছর আগে যখন স্কুলে পড়তাম, আমার এক ক্লাসমেট, নাম মনে নাই, রোল সম্ভবত ২৩, আচ্ছা, রোল ২৩ আমাকে জিজ্ঞাসা করসিলকাদের দেখলে তোর ট্যালেন্টেড লাগে?

আমি বলসিলামলালটেপে মড়ানো সামান্য এক টেনিস বল, পাড়ার সিমেন্টের রাস্তার ক্রিকেট খেলায় যে লেগস্পিন করে বল ঘুরাইতে পারে, সেই হচ্ছে আসল ট্যালেন্টেড মানুষ।

ভাবলাম ভদ্রলোককে প্রশ্ন করিজানেন কলকাতায় বন্যার পানি জমেছে অনেক?

কিংবা আর-একটু মডার্ন হইজানেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশে বন্যা হচ্ছে খুব?

চাইলে আর-একটু গোছের হইজানেন, চায়নার অনেক মেজর শহরে খুব বন্যা হচ্ছে?

না, একটু মানবিক হইজানেন, চায়নার বন থেকে একপাল বন্য হাতি বের হয়ে পাশের শহরটায় ত্রাসের ঠোক্করে প্রতিশোধ নিচ্ছে?

না থাক, আমি এত নিষ্ঠুর হতে পারি না মানুষের উপর।

ও সরি, ফার্মেসিতে আর-একজন মানুষ আছে। কাউন্টারের সামনে একটা অক্সিজেন ট্যাংক ঠ্যাস মেরে রাখা। পাশে এক ছয় বছরের বাচ্চা ছেলে টুলে অক্সিজেন মাস্ক পরে বসা।

যখন সে অক্সিজেন টানছে তার ঘাড়ের চারপাশ সূক্ষ্ম চিকন হয়ে যাচ্ছে আবার যখন নিশ্বাস ছাড়ে গলা ফুলে যায় আর ‘গৎ, গৎ, গৎ’ এমন বিচ্ছিরি অনুকম্পন হচ্ছে। এই কার্যে তার কমপক্ষে চল্লিশ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগছে। বাচ্চা ছেলের জন্য এরকম কষ্ট কেন জানি বিদঘুটে লাগে।

বাচ্চা ছেলে-মেয়ে আর বুড়োদের আসলে।

তরুণ মানুষরা শ্বাসকষ্টে থাকলে সেইটা আমার কাছে আর্ট লাগে।

আমি এমন ভাবছি, অথচ ফার্মেসি থেকে বের হয়েই আমি পাঁচটা মালব্রো এডভান্স আর ছয়টা গোল্ডলিফ সুইচ সিগারেট কিনব। এই সুইচ খাওয়ার অভ্যাসটা হইসে রাহেলের জন্য।

প্রথমে বেনসন সুইচ টানতে যেয়ে মিন্ট ফ্ল্যাভারের জন্য পুরা গলা আঠালো হয়ে গিয়েছিল।

এরপর থেকে গোল্ডলিফ সুইচ খাই। চায়ের চেয়ে খারাপ লাগে না।

এই বাচ্চা ছেলের লাংসে পর্যাপ্ত অ্যালভিওলাস থেকেও সে শ্বাস নিতে পারে না, আর আমি ডেইলি ছয়-সাতবার নিজের লাংসের কত যে অ্যালভিওলাস নষ্ট করি ঠিক নেই।

আমার আসলে এই বাচ্চা ছেলেটির জায়গায় থাকার কথা ছিল।

আমি বললামআমি কোনোকিছুরই লোক না। আমি কাস্টমার।

ভদ্রলোক ইয়াত্তাভাব নিয়ে বললেনতাহলে কতখানি বিক্রি হয়েছে তা জানার দরকার কী?

আমি চারপাশে তাকিয়ে বললামআপনার আগে আরও তিনটা ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়েছি। যেই ফার্মেসিতে সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছে সেখান থেকে কিনব।

পিছন থেকে ‘গৎ, গৎ, গৎ’ শব্দ আসছে দ্রুত।

এই কথাবার্তার মাঝখানেই কলোনি কাঁচাবাজারের সরু, জীর্ণ রাস্তা দিয়ে দুইটা লাশবাহী গাড়ি গেল। কলোনির মধ্যে কারোর জন্য আসেনি। নানাভাইয়ের মৃত্যুর সময়ে শুনেছিলাম কবর দেওয়ার সময়ে বাঁশের ঘাটতি ছিল। এই জিনিসটা আমাকে সবসময় প্যারা দিত যে কবর দিতে কেন বাঁশ লাগবে?

পরে দাদিকে কবর দেওয়ার সময়ে যখন একদম কাছাকাছি ছিলাম, তখন বুঝলামচাইলে বাঁশের বদলে খাটিয়াও ব্যবহার করা যায়।

আমার জন্য আমি খাটিয়া অনেক আগেই বেছে নিয়েছি।

এইসব কিছু বেসিক ব্যাপার মানুষ আগেই ঠিক করে রাখলে পারে, নাইলে পরে বিব্রতকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এর মাঝেই ভদ্রলোক দোকানদার বললেনকোন ফ্ল্যাভার চান?

স্ট্রব্যারি।

যার প্রেমিকের জন্য কিনছি, ফ্ল্যাভারের সাথে এলার্জিক রিএকশন হয়ে তার গাল, চোখ, নাক, থুতনি যেন ফুলে যায়।

 

দুইমাস আগে ইদ-উল-আযহা শেষ হলেও কলোনির থেকে ড্রেনের সামনে গাঁথা বাঁশ, গোবর, ভুঁড়ি, পচে যাওয়া লেজ এসব সাফ করেনি।

সিটি করপোরেশনের লোকজনের এত ঠেকা নেই যে এত গভীরে এসে সাফ করবে।

ড্রেনগুলা দিয়ে এখনও ক্ষণস্থায়ী সবুজাভ তরল বর্জ্য দেখা যায়।

গতবছরের ইদ-উল-আযহা আমার অন্যতম সুখের মুহূর্ত ছিল, আর এইবার ইদ-উল-আযহার পর আমি অন্যজনের প্রেমিকের জন্য কনডম কিনছি।

এরচেয়ে আর কী উন্নতি হতে পারে আমার?

আগের চেয়ে সামান্য একটু মানবিক হয়েছি হয়তো, অন্যের জৈবিক আকাঙ্ক্ষা বিনামূল্যে মিটিয়ে দিচ্ছি (কনডমের টাকা আমার পকেট থেকে দিয়েছি) কিন্তু আস্তে আস্তে যে আরও নিষ্ঠুর হচ্ছি ভীষণভাবে। আমি আসলেই চাই ওর প্রেমিকের এলার্জি রিএকশন হোক।

 

সোহরাদ সারা সুবাহ, যাকে আমি সুবহানাল্লাহ বলে ডাকি, মাস্ক খুলে দাঁড়িয়ে আছে ফুটওভার ব্রিজের নীচে। উচ্চতা পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি, গায়ের রং হালকা সাদা থেকে শ্যামলা। ওর ঠোঁটটা দুইদিক থেকে ভালোই চওড়া, ফলে হাসলে বলতে গেলে ঠোঁট কানের কাছাকাছি চলে যায়। তবে ওর গাল বলতে গেলে ওয়ার্ক অফ আর্ট। সামান্য হাসলেই গালটা ফুলে উঠে, তখন আমার ইচ্ছা করে কামড় দেই।

অন্যসব ছেলেরও হয়তো এমন ইচ্ছা হয় ওর গাল দেখলে তাই আমাকেই একমাত্র পারভার্ট ভাবা ঠিক হবে না।

ওর দিকে আমি যত না তাকাই, তারচেয়ে বেশি তাকাই ওর পায়ের দিকে।

ওর পা সবসময় খালি থাকে, কোনোমতে একজোড়া স্যান্ডেল। খালি পা না রেখেও উপায় কী? পা মাধুর্য করে এদেশের পাবলিক যানবাহনে উঠা সম্ভব না, জানালা দিয়ে পা কেটে নিয়ে যাবে।

একসময়ে ওকে আমি ভালোই শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু এখন ওকে আমার ঘিন্না লাগে। তার আগের কোনো কথার সাথে আমি এখনকার কোনোকিছুর মিল পাই না, যে কাজগুলা সে আগে ঘিন্না করে এক দুর্মর নাগরিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল, এখন সে উলটা পথে যেয়ে তার পুরা আইডেন্টিটি পালটে ফেলেছে। ও একটা ঢংলী কাপুরুষ। ওকে আমি এখন শুধু সুন্দর হিসেবেই দেখি, আর কিছু না।

আমি এখনও পাঁচফিট দূরে তাও সে হাত এগিয়ে বললদে তাড়াতাড়ি।

আমি প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বললামতোকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন, সুবহানাল্লাহ?

আগে সুবাহ আমাকে এভাবে ডাকতে দেখলে তাকিয়ে অন্তত একবার হাসতওর ঠোঁট চওড়া হয়ে একদম কানের লতির কাছাকাছি চলে যেত।

সুবাহ হাই তুলে বললখুব টায়ার্ড। জানি না কেন, রাতে অনেক ভালো ঘুম হয়, কিন্তু সকালে উঠলে দেখি হাত-পা, ঘাড় অনেক ব্যথা, আবার গলা এমন শুকিয়ে যায় যে চোকিং শুরু হয়।

আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললামটেনশন কম কর।

সুবাহ সাথে সাথে সরে দাঁড়িয়ে বললটেনশন নাও কয়েকমাস পরেই চলে যাবে কানাডা। কিছু চাপ আছে সব মিলিয়ে কিন্তু তাই বলে এরকম হবার কথা না।

আমি কিছু বলতে যাব কিন্তু তার আগেই সুবাহ বললতুই আর কিছু বলবি?

উঁহু।

টাকা কি দিতে হবে?

উঁহু।

সুবাহ ব্যাগ ওর ডান কাঁধে নিয়ে বললযাই এখন।

বলে উলটা দিকে হাঁটা দিল। ওর জন্য প্রিমিয়ো গাড়ি অপেক্ষা করছে।

হায় রে এদের ক্লীশে ব্যবহার।

কলোনি বাজারে ফিরে শুনি মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে‘প্রিয় এলাকাবাসী, একটি শোকসংবাদ। আল-হেলাল জোনের প্রিয় এ কে এম শাহজাহান সাহেব আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন। ওনার জানাযা বাদ যোহরে কমলাপুর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।’

আমি ফুটপাতে সিগারেটের পসরা সাজানো ভদ্রলোককে বললামপাঁচটা এডভান্স আর ছয়টা গোল্ডলিফ সুইচ দেন।

 

২.

 

সকালবেলার সামান্য পরিষ্কার হালকা বিধবা আকাশ দেখে রাতেরবেলা আমার একটা ঘটনা মনে পড়ল। আমি তখন আমার চুল একদম টাইট করে কপালের বিপরীত দিকে আঁচড়িয়ে বারান্দায় এসে বসেছি (হ্যাঁ, দুইমাস দাড়ি কামাই না)। অবশ্য খালি আকাশ না, রাতে বারান্দায় আমার তৃতীয় গোল্ডলিফ সুইচ জ্বালাব এমন সময়ে ক্রিং ক্রিং করে রিকশার বেলের শব্দ আর নাইটগার্ডের হুইসেন শব্দ কয়েকবার কানে আসল। ব্রেনের কেমিক্যাল হয়ত এসব দিয়েই সক্রিয় হয়।

আড়াই বছর আগে আমি মগবাজার কাজী অফিসের দিকের বিল্ডিংগুলোর মধ্যকার একটা ফ্ল্যাটে একজন মিডিয়োকার রকস্টারের কাছে গিটার শিখতাম।

তো একদিন তিনি দুনিয়ার সব ধরনের সন্তোষ নিয়ে বলতে লাগলেন যে কিছু গল্প লেখা শুরু করেছেনএক সপ্তাহ আগে ডিভোর্স হয়েছে। আমার গিটার শেখার মেয়াদ যেবার একমাস হল, তখনও তাকে দেখেছি যদি কোনো গানের কর্ড মনে না পড়ত, তিনি ‘সুমনা, একটু আসো তো’ বলে ডাক দিতেন। সুমনা, ওনার বউ/এক্স বউ তখন খুন্তি হাতে রুমে আসতেন, আর উনি জিজ্ঞাসা করতেন অমুক গানের কী কর্ড জানি?

এসব একটা শৈল্পিক রিলেশনশিপের উদাহরণ।

আচ্ছা, বড় গল্পের ক্ষুদ্ররূপ হলউনি ওনার একটা গল্পের উপমিতি দিলেন।

গল্পটা হচ্ছে প্রেমিকা তার প্রেমিককে নিয়ে লংড্রাইভ করছে হাইওয়েতে। মাঝ দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা যেসব থার্ডক্লাস গল্প করে আনন্দ পায় সেসব ভর্তি ডায়ালগ।

হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই, কোনদিক দিয়ে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে গাড়িটা উল্টায় দিল।

অমনি গল্পের পরিবেশ, সময় সব পরিবর্তিত হয়ে গেল।

এক বুয়া নায়িকার রুমে ঢুকে সে তার ফকানো ব্রেন দিয়ে দেয়ালে যেসব ছবি এঁকে রাখসে সেসব পরিষ্কার করে, আবার রূপ লক করে বের হয়ে গেল।

মানে, নায়িকা এই প্রেক্ষাপটে একজন পাগল।

আমার এই নিয়ে এখনও আপশোশ হয়। আড়াই বছর পরেও আমি যখন বাসার হাইকমোডে বসি আমার এখনও সেই কেন কামনা জাগে যে কেন বললাম নামানে ভাই, মূল কথা আপনি সার্ত্রের নিগেশন কনসেপ্ট পুরা প্ল্যাজিয়ারিজম স্টাইলে মারতে চান, তাই তো?

আমার মনে আছে, ওইদিন ক্লাসে আমি ছাড়া ছ’জন ছেলে, দু’জন মেয়ে ছিল।

মেয়ে দু’টি আমার চেয়ে ন’ বছরের ছোট ছিল কাজেই তাদের এই নিয়ে সেন্স থাকার কথা না, কিন্তু ছেলেদের মধ্যে চারজন ছিল মোটামুটি বয়স্ক। কাউকে আমি ইন্টারনেটে একটা জনপ্রিয় মিডিয়ার মাধ্যমে মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে দেখেছি এইসব ছেলে এইরকম ঠকবাজ?

এই মিডিয়োকার রকস্টার যেই গল্পের কথা বলেছিল, সার্ত্রের একটা বইয়ে এরকম প্রায় হুবহু উদাহরণ আছে। গল্পও না, উদাহরণ! সার্ত্রে হয়ত কফিশপের কফির মগ দিয়ে বুঝিয়েছে এটা, কিন্তু তারপরও কি কোনো পার্থক্য থাকে আসলে?

এইসব মানুষ কি সবকিছু অস্বীকার করার মানসিকতা প্রমোট করা ছাড়া কিছু পারে না?

ভালোবাসার কনসেপ্টের গান বানালেই আর গাইলেই কেউ দ্য বিটলস হতে পারে না। তার জীবনে একটাই হয়তো অ্যাচিভমেন্ট সেটা হল বাংলাদেশের এক প্রধান সারির নায়িকার সাথে (পরিচালক তার আত্মীয়) তার অভিনীত একটা নাটক আছে আর আমি এখানে অহংকার করছি না কিন্তু সত্যি বলতে নাটকটায় তার অভিনয় যে এত জঘন্য ছিল।

তাকে অল্প কিছুদিন আগেই আমি জিজ্ঞাসা করেছিলামভাই, আমাকে বেটহোভেনের বেসিক ব্যাপারগুলা বুঝাবেন?

সে দুই মিনিটে আমাকে উত্তর দিয়েছিলআমিই তো বুঝি না।

অথচ সে সংগীত বিক্রি করে খায় সে সংগীত বিক্রি করে ফ্ল্যাট, গাড়ি সবই কিনসে।

সে যে তার বাচ্চা মেয়েটাকে আমাদের সামনে যেভাবে আদর করত, সেটাও আমার ল্যাংচা স্টাইলে ঘিন্না লাগতো।

এই ধরনের মানুষ বিপরীত লিঙ্গদের মধ্যে দাঙ্গা তৈরি ছাড়া আর কিছু পারে না, জানে না।

আমার প্রথম এক্স প্রেমিকার সাথে আমি যেবার গ্রন্থমেলায় ছিলাম, তাকে উপহার দেই ‘যদ্যপি আমার গুরু’ দ্বিতীয় এক্স প্রেমিকার সাথে রেস্টুরেন্টে আইসক্রিম খাবার আগে আমি ইদগাহ মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম ‘বাঙালি মুসলমানের মন’

স্পষ্টতই, আহমদ ছফা আমার মগজের মেধায় না, মর্মমধু রোমান্সে আছেন।

আমার প্রথম এক্স প্রেমিককে আমি সামান্যতম সম্মান করি বলতে গেলে, তার একটু রুচি আছে বই পড়ার। যদিও সে জনপ্রিয়তার প্রতি বেশি আসক্ত আর তার কোনো কাজের ফলাফল আমার পক্ষে আসেনি, তবুও সবাই জানুক, আমি বৃহৎ অগ্নিজলের লবণাক্ততার সাথে সামান্য অশোকের সুশাসনও মনে রাখি।

এক রাতে ঠিক এভাবে পড়ার টেবিলে বসে আছি, কিছুক্ষণ পরই বুঝলাম কেউ আমার পায়ের বুড়ো আঙুল নখ দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে। আমার দুই পায়ের বুড়ো আঙুল দু’টির সমস্যা হল কিছুদিন পরপর নখের দুই সাইডের চামড়াসহ মাংস আস্তে আস্তে ফুলে যেতে শুরু করে। কয়দিন পর আমি জোরে টিপ দিলে, চূড়ান্ত ব্যথা লাগলেও ফোলা অংশটা ফেঁটে পুঁজ বের হয়। দুই-তিনদিনের মধ্যেই সেই অংশের চামড়া উঠতে শুরু করে আর মাংসতে ঘা হয়ে যায়। একদম সুন্দর মশলা আর সয়াবিন তেলে রান্নার মুহূর্তের গরুর মাংসের কালার হয়ে যায়। ইঁদুরই ছিল আসলে, তার সাইজ আমি দেখেছি, আমার হাতের বুড়ো আঙ্গুলের সমান। তার ক্ষিধা লেগেছিল।

আমি যদি তৎক্ষণাৎ নড়েচড়ে না উঠতাম, সে নিশ্চিত ঠিক ঘা অংশটাতেই কামড় দিত।

আমার মনে হয় ঘায়ের অংশ থেকে যে গন্ধ বের হয়, ইঁদুরটি সেটা পছন্দ হয়েছিল। তার আঁকড়ে ধরার স্পর্শ এখনও আমি ভুলিনি। আমার বাপ-মা ছাড়া আর কেউ হয়ত আমাকে এভাবে আঁকড়ে ধরেনি।

কেউ কি এখন আর জানে শান্তিনগরে প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক থাকতেন এককালে?

আমিই জেনেছি বেশিদিন আগে না অথচ যেই বই থেকে আমি জেনেছি, সেটা আমি কমপক্ষে চারবার পড়েছি।

অবশ্য কোনো স্থানকালে উপস্থিতি বিরাট কোনো সূর্যোদয় না, এককালে প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন, অন্য এককালে হয়তো কোনো ব্রিটিশ স্কলার সেখানে ছিলেন যিনি কোনো বিরাট ইতিহাস ডকুমেন্টস বানাতে ব্যস্ত ছিলেন, আর বেডরুমে কোনো বাঙালি আন্ডারএইজড নারীকে ভাড়া করে রাতে তার পরিতোষ মেটাতে অধীর ছিলেন, বলা যায় না।

 

আমার পছন্দের কিছু ব্লেড আছে যেগুলা মতিঝিলের অনেক কম জায়গাতেই পাওয়া যায়। মনে হতে পারে টেকসই বা দামি। কিন্তু আসলে তা না। ফুটপাতের ড্রেনের কাছে যেসব নাপিত চেয়ার নিয়ে বসে তারা এসব ইউজ করে।

বলা যায় যে এটাও কিন্তু আসলে শৌখিনতার পরিচয় আমি তাই ভাবি। এই ব্লেডগুলোর রাজকীয় একটা পোঁচে ঝরঝরিয়ে এক পেগ স্কচের সমান রক্ত নিমিষেই বেরিয়ে আসে।

এয়ার ফ্রেশনার যা আছে তা দিয়ে দুইরাত চলে যাবে, ঘরে পর্যাপ্ত পানির বোতলও এনে ফেলেছি। আর এইড-কিট তো কমনসেন্সের ব্যাপার।

আর-একটা সিগারেট ধরিয়ে আমি ব্লেডটা স্যানিটাইজ করে পায়ের থাই/উরুতে (যে যেই শব্দে বুঝে) ব্লেডটা দিয়ে আঁচড় কাটতে শুরু করলাম।

বারান্দা সোজা ভাষায় বললে দুইহাত মিলায় দুইহাত লম্বা। মানে আমি দুইহাত যদি মেলে ধরি আমি দুই সাইডের দুই দেয়াল ছুঁতে পারব। তার মধ্যেই মা এককোণে একটা বালতির মধ্যে মাটি ভরাট করে তার মধ্যে বাগানবিলাস গাছ লাগিয়েছেন। গাছটা আনার দুই মাসের মধ্যে কয়েকবার ফুল আসলেই এখন গাছটার পোস্ট-ওয়ার হাঙ্গার ক্রাইসিস অবস্থা। পোকার কথা ভেবে মা হলুদ মিশিয়ে পানি স্প্রে করেছেন সার-টার দিয়েছে। হয়তো অত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না বিষয় হচ্ছে গাছটা মারা যাচ্ছে। কিন্তু এই গাছেরই আশেপাশে মা ছোট ছোট বোতলে পাতাবাহারের একটা ক্যাম্প বানিয়েছেন বলা বাহুল্য এরা বেঁচে আছে। এই পাতাবাহারের জোরে মার হাতে ঋতুভিত্তিক ঘা হয় মা তাও এদের লালন করেন।

থাই চুঁইয়ে ফ্লোরে কতখানি রক্ত পড়ছে সেটা দেখার জন্য ফোনের লাইটটা অন করলাম, দেখলামমানে পিঁপড়া ভাসবে স্বাভাবিক, বাংলাদেশের বাসাবাড়ির বারান্দায় পিঁপড়া থাকা একটা সংস্কৃতি।

যেইটা বেশি অবাক করল সেটা হচ্ছে, রক্তে একটা ছাড়পোকা। কসম কেটে বলছি, সে জিহ্বা বের করে রক্ত যতদূর পারে শুষে নিচ্ছিল। আমার এতদিনের মধ্যে এইটাই আসলে প্রথমযেই বাসায় থাকি তাতে কাঠের জিনিসপত্র বলতে খালি খাট, কার্পেটও নেই।

প্লাসিকের জিনিসপত্র অনেক।

আমি নিশ্চিত এই পোকা এসেছে পাশের ফ্ল্যাটের হিন্দু বাসিন্দার থেকে।

মেজাজটা সাংঘাতিক খারাপ হইল, এই শালারা কোনো হেলথ কেয়ারিং কিছু মানে কিনা দেখি নাই।

তাদের বাসা থেকে সবসময় আলাদা একটা গন্ধ আসে গা গুলায় সিগারেটের গন্ধেও আমি সেগুলা হজম করতে পারি না।

মানে কীরকম জানি আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করতে পারব না তবে একটা উপমা দিতে পারি। একদম ফ্রেশ কাদার উপরে হাগলে সেটা কয়দিন ডিহাইড্রেটেড হওয়ার যেই এক্কারে বিষাদ মৃন্ময়ী গন্ধ হয় না? সেরকম

এসব ভাবতে যেয়েই আবার চারতলার সুচন্দার কথা মনে পড়ল

আহারে, সেও তো হিন্দু। কিন্তু ওর মাধ্যমেই আমি আসলে প্রথম হিন্দু কারোর বর্ণসুবর্ণ ভাবটা বুঝেছি। মাঝ দিয়ে এক হিন্দু ফ্যামিলিকে এইভাবে গালিগালাজ করলাম মনে মনে, এতে আমার বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ আসেনি, তবে সুচন্দার কথা কেন আগে মনে পড়ল না সেটা ভেবে সামান্য খারাপ লাগল। আমি ঠিক করলাম আমি ছাড়পোকাটা সুচন্দাকে উৎসর্গ করে হাতে তুলে নিব।

কিন্তু আলো ফেলতেই দেখি পোকাটা আর নেই। আর গায়ের যেই রং, অন্ধকারের কই মিশে গেছে কে জানে, আবার বারান্দায় টিকটিকিও অনেক আছে।

পোকা খুঁজতে যেয়েই খেয়াল করলাম আমি টিস্যু নিয়ে বসিনি।

এখন যদি আমি উঠি রক্ত টপটপ করে রুমের ফ্লোরে বসবে। তাছাড়া এভাবে কাটাকুটির পর কিছুক্ষণ সময় দিতে হয় রক্ত জমাট বাঁধার, যেটায় আমার লাগে আধঘন্টা। এই আধঘণ্টা সময় আমার জন্য মধুর হবে কিনা সেটা একমাত্র নির্ভর করে আমার অগ্রিম প্ল্যানট্যানে।

আবার খেয়াল করলাম আমি পেইনকিলার নিয়েও বসিনি।

তীব্র জ্বালা শুরু হয়ে গেল থাইয়ে, উপায় নাই এমনেই বসে থাকতে হবে।

 

 

ছোটবেলায় তোকে বেশি কাত করে ঘুম পাড়াইসি তো। এইজন্য তোর মাথাটা সামান্য লম্বা, পুরাপুরি গোল না।

এই কথাটা মায়ের। এই উক্তির উপর তিনি জোর দিয়ে আর-একটা কথা বলেছেন যে, ছোটবেলায় বাচ্চাদের মাথা নরম থাকে। সোজাসুজি সব সময় না শোয়ালে মাথা এমন হবেই

তিনি দেরি করেননি সাথে সাথে এও বলে ছাড়লেন যে তার মাথাও লম্বা একই কারণে।

এতকিছু শুনে মাকে বিশ্বাস না করে পারা যায় না আমি মাকে বিশ্বাস করি।

আমাদের ফ্ল্যাটে দুইটা বারান্দা দ্বিতীয়টা মানে বিল্ডিংয়ের অপোজিটটা দিয়ে পিছনের সব বিল্ডিং দেখা যায়।

বারান্দায় চেয়ারে বসে আছি অপোজিট বিল্ডিংয়ের দোতলার জানালায় একটা বাচ্চা ছেলে বয়স সম্ভবত পাঁচ-ছয় হবে সে ল্যাংটা হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাছার দুই অংশের মাংসল গাল গ্রিলে লেগে চ্যাপ্টা হয়ে আছে।

বাচ্চাটা আনন্দে আছে কারণ শৈশবে আমিও এমন করেছি এবং আমারও এতে খুবই আনন্দ হত। রোদের কারণে রডের গ্রিলে যে উত্তাপ থাকে, বাচ্চাদের পাছায় সেটা আলাদা ধরনের আরামদায়ক ছোঁয়া হিসেবে কাজ করে।

অবশ্য এটা বেশিক্ষণ উপভোগ করা যায় না যখন বাচ্চা লাফাতে শুরু করে কারণ তখনই বিপদটা ঘটে।

রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাঝখানে একটা কালো বিড়াল বসে আছে।

বিড়ালটা বড় হয়ে গেছে। কয়লার খনির চেয়েও কালা বিড়ালটার যখন বাচ্চা অবস্থায় ক্ষুধার্ত হয়ে মায়ের কাছে ঘুরঘুর করেও মায়ের থাবার থাপ্পড় খেত, আমি তখন থেকে তাকে মনে রেখেছি।

আজ সে বড় হয়ে গেছে দেখে খুব ভালো লাগল। সে লেজের অংশে ভর করে সামনের দুই পা প্রশস্ত করে রাজকীয় কায়দায় বসে আছে। তার ফ্লাফি পশমগুলো যেন আলাদাভাবে গুনা যাবে।

কিন্তু পিছনের ইঞ্জিনের শব্দ এতক্ষণ খেয়াল করিনি যেহেতু তন্ময় ঘোরে ছিলাম।

সিঁড়ি থেকে বাইক বের করে জানোয়াররা যাওয়ার সময়ে সে হর্ন দেওয়াটা প্রয়োজন মনে করেনি। সে ভেবেছে স্পিড বাড়িয়ে দিলেই বিড়ালটা উঠে চলে যাবে। সে আরও স্পিড বাড়িয়ে দিল কিন্তু বিড়ালটা তাও বুঝল না। পরে সে যখন ব্রেক কষল ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।

সে বাইকটা পুরাপুরি বিড়ালটার মাথা বরাবর উঠিয়ে দিয়ে পুরা খুলির হলক মাটির সাথে মিশিয়ে ফেললবিড়ালটা আর ছটফট করে মৃত্যুলাভের প্রিভিলিজ পেল না। একদম তাৎক্ষণিক ক্লিন মৃত্যু।

দোতলার বাচ্চাটা এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে লাফাচ্ছে। এখন এই দৃশ্যটা সবদিক থেকেই উপভোগ্য।

 

দুপুরের দিকে সুবহানাল্লাহকে কল দিলাম। ও দুইবার কল না দিলে ধরবে না। আবার দুইবার কল দিলে দুইবার ইচ্ছা করে কেটে দিবে। আমার সাথে কিংবা আমার মতো মানুষদের সাথেই ও হয়তো এসব করে। এসব পৈশাচিক আনন্দ। তবে আনন্দটাই মুখ্য।

আমি বললামহ্যালো সুবহানাল্লাহ।

ওপাশ থেকে চুমুক দেওয়ার শব্দ পেলাম। খুব লম্বা চুমুক। সুবহা চা খায় না তেমন। দুপুরে তো খাওয়ার সম্ভাবনাই নাই।

বল।

না এমনি, দরকার নেই তেমন।

সুবহানাল্লাহ কেশে বললজরুরি না থাকলে ফোন রাখ, ভাই। আমি অনেক টায়ার্ড। এত ভালো ঘুম হয়, তাও কেন জানি সকালে যখন উঠি শরীরে বিন্দুমাত্র জোর থাকে না।

আমার কোনোকিছু দেখে কি তোর আর আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না?

না, তেমন কিছু নাই।

, তাইলে তো আমি ভালো ছেলে।

সুবাহ হেসে বলল, তুই ভালো। কিন্তু তোর মতো ভালো মানুষ কারোর দরকার হয় না কখনও

তুই নিজে থাকোস তোর বাসা, গাড়ি আর কিছু রেস্টুরেন্টের মধ্যে। কার কী দরকার সেটা তুই কেমনে বুঝোস?

যতটুকু দেখসি সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতেসি তোকে কারোর নাই। ভেবে দেখ যদি বেশিই দেখতাম তাইলে আরও কত জায়গা থেকে বলতে পারতাম তোর মতো মানুষ সমাজে দরকার নাই।

আমি হেরে গেছি দেখেই প্রসঙ্গ পাল্টায় বললামকী হয়েছে?

সুবহানাল্লাহ কিছু বলল না।

হ্যালো?

হুঁ বল, শুনতেসি।

কী হইসে তোর?

জানি না তো। আজকে সকালে উঠে খেয়াল করলাম ঘাড়ের ডান সাইডে ছিলে গেসে। চামড়া একদম উঠা। কেউ কামড় দিসে কেমন।

আমি হেসে বললামবিছানার চাদর পালটা।

আমি প্রতিদিন পালটাই রে ভাই। তাছাড়া আজকে আবার মাহমুদ ফোন দিসে। আমি বলে ভান করতেসি।

এবার আমি একটু থেমে গেলাম। এর বিপরীতে কী জিজ্ঞাসা করব? এদের অতীতের ঘটনা শুনলে এদের বিলাসিতার যে ক্রাইম, আমার ঘিন্না লাগে।

সুবহা বললহ্যালো?

কীসের ভান?

আমি বলে নিজের সুবিধামতো কাজ করি।

আচ্ছা। ওইদিন যে কিনে দিলাম, তারপর কী হল?

কিছুই হয় নাই ওর স্ট্রোবেরিতে এলার্জি। জানতাম না আগে।

মেজাজ অনেক খারাপ হল আমার।

সুবহা বললআচ্ছা শোন, সামনে আবার আরামবাগ আসব। এইবার নরমালি কিনে দিস। ও চলে যাবে এক সপ্তাহ পর।

আমি কল কেটে দিলাম।

একবার আমার এক ক্লাসমেটের (আমি স্কুল-কলেজের কাউকে আজ পর্যন্ত আমার ফ্রেন্ড ভাবিনি) মধ্যে কথা হচ্ছিল সবচেয়ে ন্যাচারল ভাবে কীভাবে সুইসাইড করা যায়। পরে এসব আলোচনা আমি সুবহানাল্লাহকে বলসিলাম। ওইটাই একমাত্র রাত যেবার সে আমাকে সামান্য মমতা দেখাইসিল।

কেন তোর মরতে হবে ভাই? মানে এত মরার ইচ্ছা কেন? এত মরা মরা করোস কেন?

ওর কণ্ঠে তখন যেই আদরমুখর ঘাম ছিল আমি ভুলে গেছি সেটা তবে ছিল আমি নিশ্চিত।

আমার মতে সবচেয়ে কার্যকর প্রসেস হচ্ছে খাদ্যের মাধ্যমে সুইসাইড। ভেবে দেখেন, এটা একদম একটা পারফেক্ট স্ট্র‍্যাটেজি।

আপনি চাইলে টানা কয়েকমাস বেশিরভাগ টাইমে মাংস আর ফ্রোজেন ফুডের উপরে থাকলেন। এমন খাবেন যে শাকসবজির থেকে শরীর কিছু আর নিতে পারবে না। মাঝেমাঝে হচ্ছে ডান্ডি দিয়ে বক্ষপিঞ্জরে বাড়ি দিবেন ইচ্ছা মতো। একটা সময় আসবে যখন শরীর আর ফ্যাট নিতে পারবে না।

রক্তবমি আর তীব্র হাড়ের ব্যথায় মরে যাবেন। শেষে অবশ্য আপনার জ্ঞান থাকবে না কাজেই কোনো কষ্টের ব্যাপার নাই।

 

জীবন থেমে থাকে না। বাচ্চাটা এখন আর জানালার গ্রিলের সাথে নেই। বিড়ালটার মগজ এখনও রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ছোটবেলায় বারান্দা দিয়ে রুটির টুকরো ফেললে তিন সেকেন্ডের মধ্যে কাক ছোঁ মারত

আমি হালকা হয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে চায়ের পানি সসপেনে নিয়ে চুলায় বসিয়েবলতে গেলে চার মিনিটএই চার মিনিটেও আমি কাক আসতে দেখলাম না।

কিন্তু অপোজিট বিল্ডিংয়ের তিনতলা থেকেই এক ভদ্রলোক নেমে এলেন। তিনি সিগারেট খাবেন। প্রায়ই উনি এভাবে সিগারেট খেতে দিনে চারবার, রাতে তিনবার নামেন এবং তিনবারই নীল গেঞ্জি পরে নামেন। মাঝে মাঝে ওনার সাথে আমিও বারান্দা থেকে সিগারেট ধরাই আর তিনি যখন ধোঁয়া ছাড়েন আমিও তখন ধোঁয়া ছাড়ি।

সে চলে যাবার পরই বিল্ডিংয়ের সামনে একটা ট্রাক আসল আর সে আসার সময়ে বিড়ালের মগজটার কিছু অংশ পিচে আরও মিশিয়ে দিল। কাক এখন আর এটা ভক্ষণ করতে পারবে না এটা এখন চেটে খাওয়া লাগবে।

ট্রাক আসার পরপরই একটি পরিবার তোশক, বালিশ, বাসনপত্র, বই-খাতাবুঝাই যায়, একটা ফ্ল্যাটের কর্তা অবৈধভাবে একজন স্টুডেন্টকে একটা রুম ভাড়া দিয়েছিলেন।

নামাজ শেষ করে ওই বিল্ডিংয়েরই আর-এক সরকারি প্রজা ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন। অবশ্য তিনি আসার আগেই আর-একটা প্রাইভেট কার এসে রাস্তায় পার্ক করেছে। ফলে আর হাঁটার জায়গা ওভাবে নেই রাস্তায় যে আরামে হাঁটবেন সেই ব্যবস্থা নেই সূক্ষ্ম বাদামি অংশ খুঁজে শরীরের সাথে যেন গাড়ির স্পর্শ না লাগে সেভাবে হাঁটতে হবে।

তিনি অযথা তর্ক শুরু করে দিলেন ট্রাক ড্রাইভারের সাথে যে কেন সে এখানে পার্ক করসে। ড্রাইভার যতই বুঝায় মালামাল নামাতে বেশি টাইম লাগে না সরকারি প্রজাখ্যাত ভদ্রলোকের মুখে দাড়ি আছে স্বভাবতই তার ম্যাচুরিটি হয়তো আছে কিন্তু এখানে দেখলাম না সে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল।

ট্রাকচালক ট্রাক নিয়ে যখন চলে গেল প্রাইভেট কারটা ঠিক তখনও যায়নি। উনি বিনা উচ্চবাচ্যে বাসায় চলে গেলেন। ওই ফাঁক দিয়েই এলাকার কিছু কুকুর এবার রাস্তায় হাজির। তারা বিড়ালটির বাসি লেপ্টে যাওয়া মগজ চেটে খেতে লাগল।

আমি নিশ্চিত এইবার প্রাইভেট কারের ড্রাইভার এটা দেখে বলেছেছিঃ

পরে সে গাড়ির কাচ উঠিয়ে দিল।

 

বাথরুমের দরজা বন্ধের শব্দ মেথি আর পারফিউমের গন্ধেই বুঝছিলাম ছোটবোন বাইরে যাবে। মা অফিসে বাবা অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে বড়বোন অস্ট্রেলিয়ায় ঘরে কেউ থাকবে না।

যেই সে বের হল, আমি দ্রুত ওর রুমের শুধু ড্রয়ারের আলমারি খুলে অনেক খুঁজে ওর একটা ব্রা বের করে নিলাম। পোশাক একদম ঠিক জায়গায় রাখতে হবে নাইলে সে বুঝে যাবে। সে এতই খুঁতখুঁত করে তার আলমারি নিয়ে।

ব্রাখানা নিয়ে আমি আমার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। আমি যেই আলমারিতে আমার জামাকাপড় রাখি তিরিশ বছর ধরে সেই আলমারি আমার দাদির ছিল। পুরনো আমলের ক্লাসিক আলমারি টেকসই ভাবটা শুধুই অহংকার আসলে।

অথচ দাদির মৃত্যুর পর আমার বাবা ছাড়া বাকি সব চাচা-ফুপ্পী নেমেছিলেন দাদির ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করতে। আলমারিটা বাবা দান বা বিক্রি কিছুই হতে দেননি। ফলে এটা পড়েছে আমার ঘাড়ে। আমি এই আলমারিটা চরমভাবে ঘিন্না করি কিন্তু এর সাথেই আমার সংসার এখন।

আমি ব্রা-টা আমার গেঞ্জির একদম নিচে দলামুচড়া করে রেখে দিলাম।

এখানে এসে কেউ চেক করবে না।

 

৪.

 

জর্জ ডব্লিও বুশকে সেদেশের মানুষজন এখন আর তেমন ঘিন্না করে না। এর কারণ হয়তো সে যে এখন ছবি আঁকে সেজন্য। কয়দিন আগে বাচ্চাদের জন্য সে একটা চমৎকার ইলাস্ট্রেশন করসে। সে একা না অবশ্য তার মেয়েও ছিল।

চিত্রকর্মে নিয়োজিত মানুষদের প্রতি সবারই একটা আলাদা টান থাকে। চিত্রকররা খালি অবয়ব বানায় খালি জীবন দিতে পারে না।

‘ফ্যামিলি গাই’তে দেখানো হইসিল বুশ যদি তার সেকেন্ড ইলেকশন হারত সে বলে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ বাঁধায় দিত। আমি এটা পুরাপুরি বিশ্বাস করি। বুশ ফ্যামিলিটাই হচ্ছে শয়তানের জন্য উৎসর্গিত প্রিয়পাত্র।

আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এরচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি। তার ক্যাম্পাইনের সময়ে সে বাংলাদেশের গারমেন্টস থেকে বানানো শার্ট, প্যান্ট, টাইএসবের প্রশংসা বাদ দেয় নাই।

মানুষটা প্রোডাক্টের উপরে অনেক সৎ।

এই দেশের মানুষ যে বিনা কারণে তাকে ঘিন্না করে তার কোনো যুক্তি নাই আমার কাছে।

আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের ইদানীং বেশিদিন জীবিতও থাকতে দেখছি। আগে তারা হত সুপুরুষ কিন্তু হয় তাড়াতাড়ি মারা যেত কিংবা তাদের খুন করত এখন হচ্ছে তারা দেখতে কুৎসিত হয় তবে বেঁচে থাকে বহুদিন।

এই স্টেটমেন্টগুলি আব্রাহাম লিংকনের জন্য প্রযোজ্য নয় ঈশ্বর তার মঙ্গল করুক আমি ভালোবাসি ওঁকে।

মুভিং অন, আজকে বাইক পোড়ানো আর চুল কাটার কিছু ঘটনা শুনলাম। আমাকে আর এসব টানে না তেমন। ব্যাপারটা অনেকটা হল ভাষা শুদ্ধ না করে ভাষার বানান বা তাতে বিদেশি টাচ আনা সস্তা চর্চার চেয়েও জঘন্য। অনেক আধুনিক স্মার্ট ছেলে-মেয়ে তাদের বন্ধুদের ডাকে নিগা (nigga), নিগার (niggar) বলে। তারা ভাবে এটা বন্ধুত্বপূর্ণ শব্দ। কিংবা অনেকে যে একাকীত্ব বুঝানোর জন্য যেসব শব্দ ব্যবহার করে সেসব আসলে সেক্সুয়াল টার্মস।

এইসব পরিশুদ্ধ করার ডিউটি না নিয়ে ‘ভাষা বিদ্যাসাগরের বাপের সম্পত্তি না’ এসব উক্তিচারণ করে যে দাম্ভিকতা দেখানোআমার কাছে এসব এখন সেরকম লাগে। অথচ বাংলা ভাষায় নিগার অনেক সুন্দর একটা শব্দ। একটা আর্টিস্টিক শব্দ। ‘নিগার’ এই দেশের অনেক নামকরা নায়িকাদের নাম।

সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া এক ছেলে তার স্কুলের পোশাকে যদি তার ফ্রেন্ডকে ইঙ্গিত করে পাবলিক প্লেসে ডাকে— ‘নিগা, নিগা, নিগা’ এসব আমার বলা উচিত হবে না। আমি এখনও ভার্জিন।

তো যাই হোক, ঘটনা হল ভদ্রলোক রাইড শেয়ারিং কাজের সাথে যুক্ত। পুলিশি হয়রানি সহ্য করতে না পেরে দুঃখে তিনি পূর্ববাড্ডা পাঁচতলার মেইন রাস্তায় নিজের বাইকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। পরে অবশ্য তিনি নতুন বাইক পেয়েছেন পুলিশের থেকে, পুলিশের হাত ধরে তিনি সরাসরি বলেছেনআমি মানসিক সমস্যায় ভুগছি।

কয়েক ঘণ্টা পরই রাইড শেয়ারিং গোষ্ঠী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছয় দফা দাবি দিয়েছে। সবকিছুতেই ছয় দফা দাবি। ঐতিহ্যপূর্ণ বটগাছ বা পার্ক রক্ষা করা— সেখানেও ছয় দফা দাবি। এদের ছেলেমানুষির লিমিট নেই বলতে গেলে। সলিড কোনো অবয়ব বারবার ঠেললেও যে সরে না, এরা কবে বুঝবে? ধর্মঘটের মোরাল বর্তমানে এদেশে ডিনারের পর সামান্য দুধ-কলা ভাত খাওয়ার চেয়েও বিলুপ্ত। এরা জানে না, যেই পলিমার অস্তিত্ব থেকে গড়ে তোলা যায় সেটায় কীভাবে পূর্ণশ্রম দিতে হয়।

আবার এইযে তাদের দাবি, সিকিউরিটি সম্পর্কিত লাইন মোটে একটাআবার নারী ড্রাইভারদের নিয়েও কোনো কথা নেই। নারীবাদের কিছু কনসেপ্ট আমলে নিলে অনেক কথাই সত্য হবে, কিন্তু চিন্তাভাবনা কি এত ছোট করলে চলে?

এই যে পুরানো সব কাজকামের এইভাবে রিপিটেশন, আমরা জানি সামান্য প্যারাসাইটও নিজের মধ্যে মিউটেডেড হয় যার জন্য বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুলেও সেই ফ্লু ধরে বা পেটখারাপ হয়। এমন দুর্নীতিবাজ সময়ে যেখানে প্রশান্তির চর্চা নেই আদিমকালের সংঘাত দিয়ে দাবি আদায় করার মানসিকতাকে প্রমোট করে তারা সাধারণ মানুষদের বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় এমনদের আরও লাঞ্ছিত করতে চায় আমি এই দেশের ভালো ভবিষ্যত দেখি না সেখানে।

একটা খোঁচা দেই এই বাইকচালক কেন বাইকটা গ্রহণ করল? তার বাইক তো চুরি হয়নি পুলিশ বহুবার এমন বাইক চুরির খবর পেয়ে চালকের বাড়ির খোঁজখবর নিয়ে যেই শুনেছে যে পরিবারে অনেক টাকার সমস্যা, তারা খালি বাইক উদ্ধার করে আনেনি, সরকারিভাবে তারা সাহায্যও করেছে।

এর চেয়ে ব্যাটার উচিত ছিল নিজের গায়ে আগুন দেওয়া। অনেকটা গাদ্দাফিকে বা মিশরের প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য তরুণরা যা করেছিলসেরকম দৃষ্টান্ত তৈরি হত।

এই দেশেও এমন এক ঘটনা আছেআছে বলতে হচ্ছিল, পরে হয়নি।

 

বাবা-মার অর্ডার হয়ে গেছে। দুই জনই অ্যাকাউন্টিং অফিসার ডেসিগনেশন পেয়েছেন। বাবাকে আর ট্যুরে থাকতে হবে না। এই মাসের শেষেই চলে আসবেন।

আজকে বৃষ্টি হচ্ছে রাতে তবে বেশি জোরে না কারণ চল্লিশ মিনিট পরেও বারান্দার চেয়ারটা ভিজে যায়নি চেয়ারটা গ্রিল থেকে মোটে কয়েক সেন্টিমিটার দূরে।

আজকে আর ভুল করলাম না। যদি ইচ্ছা হয় সেজন্য সব এনে রেখেছি।

সামনের বৃক্ষের গড়নে একটা প্রাণী দেখলাম যার পেন্সিল সরু লেজ আছে পিছনে। বৃক্ষের একটা লম্বা ডাল আমাদের রান্নাঘরের জানালার দরজা পর্যন্ত গিয়েছে।

প্রাণীটা একটা ইঁদুর।

সামনে বাগানবিলাস গাছ, পাতাবাহার, কিছু পুদিনাপাতার গাছ গন্ধ আসছে।

আমি ব্রা-টা গেঞ্জিগুলোর নীচ থেকে বের করে বারান্দার ফ্লোরে বসলাম।

ভুঁড়ির জন্য ব্রা-টা পুরোপুরি বুকে বসল না তবে দুই সাইড ঠিকমতো ফুলে উঠেছে। আমি মোবাইলের আলো ফেললাম বুঝা যায় না আমি পুরুষ।

আমি হাত বাড়িয়ে পাতাবাহার গাছটার পাতাগুলো ঘষলাম। আঙুলগুলো আঠালো হয়ে গেল জ্বলছে। আমি বাম হাত দিয়ে বুকের বাম অংশে হাত দিলাম। পুরা শরীরটায় ট্রিগারড হল। আমি মুঠ করে একবার চিপ দিলাম। না, বেশি শক্ত লাগছে। আমি পিছন থেকে হুকটা খুলে ফেললাম, হ্যাঁ, এইবার আগের মতো হচ্ছে। এইবার মুঠ করে আবার চিপ দিলাম, আবার, আবার

বাম কানটায় সুড়সুড়ি লাগল অনেক। আমি বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কানে ঢুকিয়ে অনেকক্ষণ ঘুরালাম। ফিল পাচ্ছি আঙ্গুলের ডগা আঠালো হয়ে গেছে পিচুটির রং হয়তো কমলা।

এবার ডানসাইডে আমি মুঠ করে ধরে চিপ দিলাম। গতবার কাপল রেস্টুরেন্টে ওর ওটাকে সবচেয়ে কম আদর করেছিলাম। সত্যি বলতে, আমার জ্বর ছিল। দম হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু ওর মুখটা কাছে এনে ঠোঁটে না, গালি খালি চুমু আর চুমু আর চুমুথামিনি যতক্ষণ না ও বলছিলহয়েছে।

বসে থাকা অবস্থাতেই দেখলাম (আমার উচ্চতা ভালোই) নাইটগার্ডরা বের হয়েছে পাহারার জন্য। তারা হাসছে তারা তাদের লাঠিটা হাতে নিয়ে ক্লকওয়াইজ ঘুরাচ্ছে।

আমার কান্না আসতে লাগল। ট্রাউজারটা ভেজা ভেজা লাগছে প্রচণ্ড

আমি ভাবছি যতটুকু জীবনটা মনে আছে সেটুকু। আমার ডেডিকেশনের বলয় আমাকে এত নিঃস্ব করেছে।

ডান হাতের তালু দিয়ে নিজের গালগুলোকে আদর করে দিলাম শেভ করিনি অনেকদিন ও লম্বা চুল আর দাড়ি অনেক ভালোবাসত

ডান হাত দিয়ে বাম হাতটাকে আর বাম হাত দিয়ে ডান হাতটাকে অনেক আদর করলাম। পরে দুইহাত দিয়েই পিঠের যতদূর যায় নিজেকে জড়িয়ে ধরলাম। অগ্রবাহু দু’টি বুকের দুই অংশে চাপ দিল। চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল আমার কিন্তু গাল, চোখ মুছলাম না। নিজেকে যে কত আপন লাগছে, এতকিছুর পরেও শরীরটা চলছে, শরীরটাই আমাকে এখনও ত্যাগ করেনি।

পিঠটা অনেকক্ষণ কাত ছিল সোজা হতেই কোমরে এত টান লাগলউহ।

সাথে সাথে বাম কানে সেই একবারই, খালি একবারই, মোটে একবারই আনন্দের উদ্দেশ্য শুনেছিলামআউচবেল দিল শব্দটা।

আমিও তো চাই, আমার একটা স্ত্রী থাকুক, একটা সন্তান থাকুক।

ব্যথায় মুখ হাঁ করতেই দেয়াল থেকে মরে যাওয়া রংয়ের চর্বি মুখে পড়ে গেল থুঃ, ওয়াক থুঃ

আমি এত কান্না করছি একসময়ে হেঁচকি উঠে গেল। বারান্দার দরজা বন্ধ পানির বোতল বিছানায় শুয়ে আছে। এই অবস্থায় উঠে যদি আলো জ্বালাই খুব লজ্জা লাগবে আমার।

রাত এখন ৩:৪৫ বাজে। আমিও এখন রাতে অনেক ভয় পাই। আমি কান্না করছি, আমার মনে আছে সেও একবার এভাবে ফোন দিয়ে কান্না করেছিল খুব। এখনও রাতে আমি আশা করি রাতে কল আসবে, আসবেই। আমার জীবন খোদার আর নিজের ভাগ ছাড়া সেটাতেই যে উৎসর্গিত।

কেউ কি আমাকে দেখতে পাচ্ছে? অপোজিটের সব বিল্ডিংয়ের বাতি নেভানো এক বিল্ডিংয়ের মানুষ পায়রা পালে সেই পায়রা এখন আর কাকদের ভয় পায় না তাদের গায়ের দামও অবশ্য সস্তা।

আমি কান্না করছি আমি টমেটোর স্বাদ ভালোবাসি না কিন্তু মাছের সাথে মিষ্টি স্বাদটা ভালোই লাগে। আমি টানা কয়েকমাস আর লালশাক খেতে পারি না। তবে তেল ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব আমি এত ভেঙে পড়িনি। নিজ শরীরটাকে আমি ভালোবাসি আমার শরীর আমাকে ভালোবাসে আপাতত।

 

দুইমাস পর এই দেশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আমি জীবনে প্রথমবার ভোট দিব।

ওর আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে কিংবা ও হয়তো কখনোই ভোট দিবে না।

 

No comments:

Post a Comment